কলকাতা টাইমস :
মণিপুর রাজ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যের তিনটি বড় হাসপাতালের মর্গে ৯৬টি মৃতদেহ পড়ে আছে, যেগুলোর জন্য এখনো কেউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, ভয়ে লোকজন হাসপাতাল থেকে স্বজনদের মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে এখন সুপ্রিম কোর্ট গঠিত সাবেক বিচারপতিদের একটি কমিটি রাজ্য সরকারকে মৃতদের একটি তালিকা প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে মৃতদের শনাক্ত করা যায় এবং মৃতদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যায়। তাতেও যদি কোনো মৃতদেহের কোনো দাবিদার না এগিয়ে আসে, তাহলে সসম্মানে অন্তিম সংস্কার করে দেওয়া হোক।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মণিপুর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন নিহত হয়েছে এবং অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
মণিপুর রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও কুকি আদিবাসীদের মধ্যে দাঙ্গা বেধেছে। এই গোষ্ঠী দুটি রাজ্যের দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করে। সহিংসতার পর এখন পরিস্থিতি এমন যে এক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্য গোষ্ঠীর ভূখণ্ডে যেতে পারে না।
সমগ্র মণিপুর রাজ্য জাতিগত ভিত্তিতে ভাগ হয়ে গেছে। এখনো ঘটছে সহিংসতার ঘটনা।মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওয়াহেংবাম টেকেন্দর সিং বলেন, ‘জাতিগত সহিংসতায় নিহত ৯৬ জনের মৃতদেহ ইম্ফলের তিটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে—রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস, জওয়াহেরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস এবং চুড়াচাঁদপুরের রিজিওনাল মেডিক্যাল কলেজ।’
ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেই গোষ্ঠীর আধিপত্য রয়েছে এবং এখানকার দুটি হাসপাতালে রাখা মৃতদেহগুলো কুকি নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
চুড়াচাঁদপুরের জেলা মেডিক্যাল হাসপাতালে যে মৃতদেহগুলো রাখা হয়েছে তার মধ্যে কুকি ও মেইতেই উভয় গোষ্ঠীরই দেহ রয়েছে, যদিও তাদের মধ্যে কুকিদের মৃতদেহের সংখ্যা বেশি।
টেকেন্দর সিং বলেন, ‘সমস্যা হলো সহিংসতার পর কুকিরা মেইতেইয়ের এলাকায় যেতে পারে না এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা কুকিদের এলাকায় যেতে পারে না। আইন অনুযায়ী, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেহ শনাক্ত করতে হয়। পরিবারের সদস্যরা একে অন্য জাতির অঞ্চলে যেতে না পারায় কয়েক মাস ধরে এসব দেহ শনাক্তকরণ ছাড়াই এখানে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালগুলো এখনো ওই সব দেহের ছবি ও সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেনি।