মোটা অংকের লাশের ব্যবসায় নামলো ‘জান্তা” সেনাবাহিনী
কলকাতা টাইমস :
মিয়ানমারের পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের কাছে এখন চিন্তার বিষয়। জান্তা সেনার কীর্তি-কলাপ বিশ্ব নিন্দিত । কিন্তু সেই জান্তা সেনা এবার যা করলো তা যেন মানব ধর্মলেই কলংকিত করে দিয়েছে। নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়েও ক্ষান্ত হয়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারীদের লাশ হস্তান্তরের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে সেনাবাহিনী। প্রতি লাশের জন্য নেওয়া হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার মিয়ানমার কিয়াট বা সাত হাজার ২০০ টাকা।
দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনের কাছের বাগো শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ হামলায় অন্তত ৮২ জন নিহত হন। হত্যাযজ্ঞের পর মর্গে লাশের স্তূপ জমে ওঠে। বাগো ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করে, ‘শুক্রবার (৯ এপ্রিল) যারা নিহত হয়েছেন, তাদের দেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে মিয়ানমারের জান্তা।’
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বলেছে, নিজ দেশের জনগণের ওপর মিয়ানমারের জান্তার রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছে চীন ও রাশিয়া। এ দুটি দেশের বাধার কারণে জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাচ্ছে না। এক ব্লগ পোস্টেই মন্তব্য করেন ইইউর বিদেশ নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। বিক্ষোভে নিহতদের লাশ সেনাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গুনতে হবে ৮৫ ডলার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরটিতে বসবাসকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের পর শহর থেকে অনেক অধিবাসী পালিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন।’
এএপিপির রিপোর্ট মতে, বাগোতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অ্যাসল্ট রাইফেল, রকেটচালিত গ্রেনেড ও হাত গ্রেনেড ব্যবহার করে। তবে সেনাবাহিনী দাবি করে, বাগোয় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হয়েছিল।
এদিকে, মিয়ানমারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোববার অফিশিয়াল টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে দূতাবাস বলেছে, বাগোসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে অর্থহীন প্রাণহানির ঘটনায় তারা শোকাহত।
দেশটির বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী যে সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় টুইটে। টুইটে বলা হয়, সংকট সমাধানের সক্ষমতা সেনা শাসকদের রয়েছে। সহিংসতা ও হামলা বন্ধ করে তার সূত্রপাত করা দরকার।
মিয়ানমারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন চলছে। এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ৭০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
এছাড়াও সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভের জেরে তিন হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে। মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী।