November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

রাখালদাসকে ভুলেই গেছি, মহাদেবন-এর নামই শুনিনি

[kodex_post_like_buttons]

রজত পাল

বাঙালি খবর রাখে না। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৯২০-২১ – এ মহেঞ্জোদড়ো আবিস্কার ও খনন) -এর পরবর্তীকালীন সিন্ধুসভ্যতার আবিস্কারের খবর আমবাঙালি বিশেষ রাখে না। সিন্ধু লিপি তো অনেক দূরের কথা! বঙ্কবিহারী চক্রবর্তী ৮ ও ৯ এর দশকে যে সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের  বিষয়ে গোটা চারেক বই লিখেছেন, কজন বাঙালি তার নাম জানেন ? সেক্ষেত্রে তামিল পন্ডিত ( Epigraphist ) ইরভাথম মহাদেবনের নাম জানবেন, এমনটা আশা করা নেহাত্‌ দুরাশা বৈকি।

মহাদেবন ৫৪-৮০ পর্যন্ত IAS চাকরী করে স্বেচ্ছাবসর নেন। তার আগেই প্রাপ্ত সমস্ত সিন্ধু লেখগুলির এক বিরাট অভিধান (Indus Script, Text, Concordance & Facts, 1977 ) প্রকাশ করেছেন J, Nehru Fellowship নিয়ে। ৮০-তে চাকরী ছেড়ে ওই লিপির পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় পড়ে রইলেন। তামিল ব্রাহ্মী লিপি (Early Tamil Epigraphy ) নিয়ে যুগান্তকারী কাজ করলেন। ২০০৯ সালে সে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন ‘পদ্মশ্রী’।

তামিল জাত্যাভিমান থাকা সত্বেও আর্য-দ্রাবিড় জাতিভেদ স্বীকার করতেন না ( ‘The Aryan -Dravidian division is based on racial theories… and the differences between Sanskrit and so-called Dravidian languages are greatly exaggerated’ – Aryan, Dravidian or neither, 2002)। তবে আর্য-দ্রাবিড় পৃথক ভাষাগোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করতেন। মনে করতেন দ্রাবিড় ভাষা দিয়েই সিন্ধুলিপির পাঠ করা সম্ভব। যদিও শেষপর্যন্ত পাঠ করে উঠতে পারেননি, সে কথা অকপটে মেনে নিয়েছেন। দেশবিদেশে যেমন এই বিষয়ে বহু সেমিনারে পৌরোহিত্য করতেন, তেমনই সিন্ধুলিপির উপর নতুন কাজ প্রকাশ পেলে খবর রাখতেন। এই প্রতিবেদক তথা গবেষকের  বইটি( Reading the Indus Sarasvati script, Precursor of all Indic scripts  ) হাতে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। বৃদ্ধ বয়সেও হাতে লিখে দু পাতার চিঠি পাঠিয়েছিলেন। অসম্ভব বিনয়ী মানুষটি জানিয়েছিলেন যে যদিও তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন, তবুও জানতে ও শিখতে আগ্রহী এবং শেষপর্যন্ত সত্যেরই জয় হবে। ওঁনার লেখা বই পাঠাতেন এবং আমার মতো অখ্যাত লোকের মতামতও জানতে চাইতেন।

৮১ সালে তামিল দৈনিক ‘দিনমনি’-র সম্পাদক হন। জ্ঞানচর্চার সহজসত্যকে স্বীকার করতেন। হিন্দুত্ববাদী গবেষক রাজারাম-এর সাথে যেমন বিরোধ ছিল, তেমনই  Harvard University -র Witzel etc ( যারা সিন্ধু লিপির কে চিত্র ছাড়া কিছু মনে করেন না ) সাথেও তীব্র মতবিরোধ ছিল। সাম্প্রতিক ইতিহাস নিয়ে JNU -র তথা Marxist Historian দের পক্ষপাতপূর্ণ অবস্থান তাকে কষ্ট দিয়েছে।

পক্ষপাতহীন, কেবল সত্যকে জানার জন্য জ্ঞানচর্চার আজীবন কান্ডারী গতকাল (২৬.১১.১৮) চলে গেলেন। বয়ষ হয়েছিল ৮৮। রেখে গেলেন তার সুবিশাল গবেষণাপত্রগুলি। তার ১৯৭৭ সালের প্রকাশিত সিন্ধুলিপির অভিধান (Indus Script,  Text Concordance 1977 ) টির মাধ্যমেই আমদের মতন গবেষকরা কাজ করে চলে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

Related Posts

Leave a Reply