পিটিয়ে নিকেশ ১ হাজার ‘ডাইনি’
কলকাতা টাইমস :
ডাইনি অপবাদে প্রতিদিন গড়ে তিনজন করা হয়েছে ভারতের ঝাড়খণ্ডে। এভাবে রাজ্যটিতে গত ২২ বছরে এক হাজার মানুষকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। ২০২২ সালের এই কয়দিনেও এই কুসংস্কারের শিকার হয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় এক হাজার জনের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী।
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এখনও ভারতের রাজ্যে রাজ্যে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুন বা মারধরের অভিযোগ উঠে আসে খবরের শিরোনামে। এই কুসংস্কারে সবচেয়ে এগিয়ে ঝাড়খণ্ড। ২০০০ সালে বিহার থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় ঝাড়খণ্ডকে। তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ২৪ জন এই কুসংস্কারের বলি হয়েছেন।
গত ২ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার লুকিয়া গ্রামে এক নারীকে ডাইনি অপবাদে মারধর করেন স্থানীয়রা। মৃত্যু হয় তার। মাকে রক্ষা করতে ছুটে যান অজয় ও সঞ্জয় ওঁরাও নামে দুই ছেলে। রক্ষা পাননি তারাও। তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে চলে নির্মম প্রহার। দুই ভাই গুরুতর আহত হন। এখন অজয়ের চোখটাই নষ্ট হওয়ার পথে। এই ঘটনায় পুলিশ যে অভিযোগ দায়ের করে সেখানে মূল অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং পঞ্চায়েত প্রধান। সব মিলিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি। খুনতি জেলার অদকি থানার তিরলা গ্রামে এক যুগলকে পিটিয়ে খুন করেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, তারা ‘কালাজাদু’ জানতেন। যদিও পাঁচদিন পর এই খবর প্রকাশ্যে আসে।
১২ জানুয়ারি। আবারও ডাইনি সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। থেতাই থানার অন্তর্গত কুড়পানি গ্রামে এক নারীকে ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযুক্তের বয়ান অনুযায়ী, ঝড়িয়ো নামে এক প্রতিবেশীর ‘কুনজরে’- অকালে মারা যান তার স্ত্রী। এখনও রাঁচির এক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী।
২৭ জানুয়ারি। ডাইনি সন্দেহে আবারও একটি খুনের ঘটনা ঝাড়খণ্ডে। খুনের বীভৎসতা চমকে দেওয়ার মতো। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই নারীকে খুনের পর গাড়িতে তার মরদেহ লুকিয়ে রাখেন অভিযুক্তরা। তারপর গাড়িটিকে খুনতি থানা এলাকার একটি নির্জন জঙ্গলে ফেলে রাখেন চার অভিযুক্ত। আর এই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পেশায় নার্স! পুলিশি জেরায় সালোমি মিজ নামে ওই নার্স জানান- হঠাৎ তার ছেলের মৃত্যু হয়। নার্সের ঘোর সন্দেহ, নোরা লকড়া নামে তার ভাড়াটে ডাকিনী বিদ্যা করে তার ছেলেকে মেরে ফেলেছেন!
২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। গুমলা জেলায় পাঁচজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে আটজনের বিরুদ্ধে। সেখানেও কারণ সেই ডাইনি অপবাদ। তার আগের দু’মাসে তিনজন এই কুসংস্কারের বলি হন।
ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি সন্দেহে খুনের ঘটনা ৩৫টি। সিআইডি’র রিপোর্ট বলছে, ২০১৫ সালে ডাইনি সন্দেহে ৪৬ জন নারীকে পিটিয়ে মারা হয়। ২০১৬ সালে ৩৯, ২০১৭ সালে ৪২, ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ২৭ এবং ২০২০ সালে ২৮ জন এই কুসংস্কারের বলি হন।
২০২১ সালের পুরো তালিকা এখনও আসেনি। তবে পুলিশের খাতায় এমন ২৪টি খুনের মামলা হয়েছে। গত সাত বছরে ঝাড়খণ্ডে ২৩০ জনের মৃত্যুর কারণ হল ডাইনি অপবাদ। গত ২২ বছরে সংখ্যাটা এক হাজারের বেশি!