November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

১৪০০ সন্তানের ‘জননী’ আশ্রয়হীন এক ভিখারিনি 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

মাদের দেশে এমন মা’ও আছে যে সন্তান জন্ম দিয়ে দারিদ্র্যের কারণে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। কিন্তু সেখানেই এমন এক ‘ভিখারিনী’ মা আছেন যিনি সেই ফেলে দেওয়াদের কুড়িয়ে পরম মমতায় বুকে তুলে নেন। একজন, দু’জন নয়, ১৪শ’রও বেশি শিশুর খাওয়া পরার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ৭০ বছর বয়সী এই মহিয়সী নারীর নাম সিন্ধুতাই সাপকাল। এমন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি প্রায় ৭৫০টি পুরস্কার পেয়েছেন। তাকে ‘অনাথ জননী’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের পুণেতে চারটি অনাথ আশ্রম আছে সিন্ধুতাই সাপকালের। এর মধ্যে দুটি মেয়েদের , দুটি ছেলেদের জন্য। এ কাজে তার মেয়ে মমতা তাকে সাহায্য করেন। আর প্রথম পালিত পুত্রটিও সহায়তা করেন অনাথ আশ্রমগুলো পরিচালনার কাজে। এই পরিত্যক্ত শিশুদের বেশিরভাগই পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজেদের জীবনে। এমনকি কেউ কেউ আইনজ্ঞ, ডাক্তার কিংবা অধ্যাপকও হয়েছেন।

রেল স্টেশন, পরিত্যক্ত আস্তাকুঁড়, আবর্জনার স্তূপ, এমনকি রাস্তার কুকুরের মুখ থেকেও ছোট ছোট শিশুদের উদ্ধার করে সিন্ধুতাই ঠাঁই দেন তার আশ্রমে। শুধু মমতায় নয় লালনে-পালনেও সিন্ধুতাইয়ের আশ্রমের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য সরকার চালিত অনাথ আশ্রমগুলোর।  এখানে কখনই ১৮ বছর হতে না হতেই পালিতদের বের করে দেন না।

কারণ সিন্ধুতাই বলেন, ‘১৮ বছরের পরও বাচ্চারা আমার কাছেই থাকে। আমি তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করি। তারা সংসার পাতালে সেখানেও সাহায্য করি’। ‘১৮ বছর হয়ে গেলেই তো তারা খুব বিচক্ষণ হয়ে যায় না। বরং এ সময়টাতেই আরও বেশি করে অভিভাবকের ভালোবাসা জরুরি। নয়ত বিপথগামী হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।’

সিন্ধুতাই সাপকালের এই সেবামূলক কাজে আসার পেছেনে রয়েছে তার নিজের জীবনের দুঃখ কষ্ট। খুব গরিব ঘরে জন্ম। ৯ বছর বয়সে পড়াশোনা ছাড়তে হয় তাকে। ১০ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। এরপর আরও ১০ বছর কাটে নানা দুঃখ দুর্দশায়। তারপর ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। গোয়াল ঘরে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

করুণ এই জীবন কাহিনির স্মৃতিচারণ করতে করতে সিন্ধুতাই বলেন ‘গোয়ালে সন্তানের জন্ম দিলাম। মেয়ের নাড়ি পড়ে আছে দেখে নিজেই পাথর দিয়ে তা কাটলাম। তারপর আত্মীয় স্বজনের দুয়ারে দুয়ারে গেলাম, মায়ের কাছেও গেলাম। কেউ আশ্রয় দিল না। সবাই তাড়িয়ে দিয়েছিল আমাকে।’

তিনি জানান, ‘ভিক্ষে করে, ট্রেনে গান গেয়ে গেয়ে  নিজের আর সদ্যজাত কন্যার পেট চালিয়েছি । সেই সময় রাস্তায় রাস্তায় তিনি অনেক অনাথকে দেখতাম, তারই মতো বেঁচে থাকার লড়াই করছে। খাবার ভাগ করে খেতাম তাদের সঙ্গে, শুনতাম তাদের জীবনের কথা। মৃত্যুপথযাত্রী একজন ভিক্ষুকে একটু খাবার আর জল দিয়ে মনে হয়েছিল, পরের জন্য কিছু করতে পারাটাই জীবনের আসল কাজ।’ এভাবেই আশ্রয়হীন এক ভিখারিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন ভারতের ‘অনাথ জননী’।

Related Posts

Leave a Reply