বন্ধুর কথায় 28 বছর আঁধারে

১৯৮৮ সালের ১৩ জুলাই উইলমিংটন শহরের একটি পোষা প্রাণী ও উপহার সামগ্রীর দোকানে পামেলা ড্রেহারের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মাত্র ৩ মাস আগে পামেলা ওই দোকানটি কিনেছিলেন। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মাথায় গুলির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনার তদন্তে নেমে অন্ধকারেই থেকে যায় পুলিশ। ফলে হত্যাকাণ্ডের কোনো তথ্য দিতে পারলে ৫ হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়।
সে সময় ওই স্থানের বাসিন্দা নিনা রেইডফোর্ড নামের এক স্কুল ছাত্রী পুলিশকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় সে স্মলকে দোকানের দরজা বন্ধ করতে দেখেছিল। নিনা, স্মল এবং বোলিঙ্গার একই স্কুলে পড়তো। নিনা দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় স্মেলকে দেখায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। এই সময় স্মেলের বন্ধু বোলিঙ্গারকেও তলব করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বোলিঙ্গার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তখন কোনো তথ্য জানে না বলে দাবি করে। অবশ্য পরে পুলিশকে জানায়, তারা যখন দোকানটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন ফোন করার প্রয়োজনে স্মেল সেখানে প্রবেশ করে। সেসময় স্মেল দোকানে খুন এবং লুটপাট চালায়। দোকান থেকে বের হওয়ার সময় স্মেলের পরনে ভিন্ন শার্ট ছিল।
বোলিঙ্গার আরও দাবি করে, পরে তাকে বন্দুক ঠেকিয়ে স্মেল হুমকি দেয়। বলে, যদি সে হত্যা এবং লুটের ঘটনা প্রকাশ করে তবে তারও পরিণতি পামেলা’র মতোই হবে।
এমন তথ্যের পর স্মেলকে দোষি সাব্যস্ত করে আদালত। ফলে দীর্ঘ ২৮ বছর কারাগারেই কেটেছে জনি’র। এই সময়ে মা’কেও তার হারাতে হয়েছে। মৃত্যুর সময় তো দূরে থাক, গেলো ৬ বছরে মা’কে দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে একথা ভেবেই কেঁদে ফেলেন নির্দোষ জনি।
বোলিঙ্গার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা জেমস লাইটনার ভয় দেখায় যে, সহযোগিতা না করলে বোলিঙ্গারকেই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। ফলে তাকে গ্রেফতার করা হবে এবং বিচারের পর তার ফাঁসি দেয়া হবে।
বোলিঙ্গার বলেন, সেসময় বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। তাই ঐ কর্মকর্তা যা বলেছিলেন তাই বিশ্বাস করে বসেন। ঐ তদন্তকারী কর্মকর্তা সারারাত ধরে মিথ্যে জবানবন্দি তৈরি করেন এবং আদালতে সেভাবে বলার জন্য ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে বাধ্য করেন। সে সময় নাকি তার দাদু, যিনি কিনা সাবেক পুলিশ সদস্য এবং এফবিআই এজেন্ট ছিলেন.. তাকে কথাগুলো বলেন। তবে সেসব শুনে দাদু বোলিঙ্গারের সুরক্ষার জন্য ঐ মিথ্যে জবানবন্দি দেয়ার ব্যাপারেই মত দেন।
এসময় আদালতে কেঁদে ফেলেন জনি স্মেল। বলেন, মিথ্যে অপবাদ মাথায় নিয়ে জীবনের ২৮টি বছর কেটেছে। এখন আমি মুক্ত হয়ে নিজের মতো বাঁচতে চাই।
বিচারক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মানুষের বাস্তব জীবন কল্পনাকেও হার মানায়। তবে হাজার মিথ্যেও সত্যকে যে চাপা দিতে পারে না, এঘটনা তারই এক উদাহরণ। তিনি রায়ের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন।
কল্পনাকেও হার মানানো ঘটনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়ার সৌভাগ্য হচ্ছে জনি স্মেলের