বন্ধুই পাঠিয়ে দিল ২৮ বছর আঁধারে
কলকাতা টাইমস :
জনি স্মলের বয়স যখন মাত্র ১৬ বছর, তখন তার জীবনে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। সেটা ১৯৮৯ সালের ঘটনা। আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিয়ায় ৩২ বছর বয়সী পামেলা ড্রেয়ারের মৃতদেহের সন্ধান মেলে। পুলিশ জানায় এটি খুনের ঘটনা।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জনি কিছু না জানলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরই বিচারক তাকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আর নির্দোষ হলেও তার এই সাজার পেছনে যিনি ছিলেন, তিনি জনিরই এক বন্ধু.. ডেভিড বোলিঙ্গার। আদালতে বন্ধুর বিরুদ্ধে ডেভিড মিথ্যে সাক্ষ্য দেয়ায় বিচারক জনিকে দোষি সাব্যস্ত করেন।
সেবার মিথ্যে সাক্ষ্য দিলেও দীর্ঘ ২৮ বছর পর আদালতকে ডেভিড জানায়, হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালে মিথ্যে কথা বলেছিল সে।
উইলমিংটন শহরের একটি পোষা প্রাণী ও উপহার সামগ্রীর দোকানে পামেলা ড্রেহারের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মাত্র ৩ মাস আগে পামেলা ওই দোকানটি কিনেছিলেন। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মাথায় গুলির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনার তদন্তে নেমে অন্ধকারেই থেকে যায় পুলিশ। ফলে হত্যাকাণ্ডের কোনো তথ্য দিতে পারলে ৫ হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়।
সে সময় ওই স্থানের বাসিন্দা নিনা রেইডফোর্ড নামের এক স্কুল ছাত্রী পুলিশকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় সে স্মলকে দোকানের দরজা বন্ধ করতে দেখেছিল। নিনা, স্মল এবং বোলিঙ্গার একই স্কুলে পড়তো। নিনা দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় স্মেলকে দেখায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। ওই সময় স্মেলের বন্ধু বোলিঙ্গারকেও তলব করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বোলিঙ্গার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তখন কোনো তথ্য জানে না বলে দাবি করে। অবশ্য পরে পুলিশকে জানায়, তারা যখন দোকানটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন ফোন করার প্রয়োজনে স্মেল সেখানে প্রবেশ করে। সেসময় স্মেল দোকানে খুন এবং লুটপাট চালায়। দোকান থেকে বের হওয়ার সময় স্মেলের পরনে ভিন্ন শার্ট ছিল।
বোলিঙ্গার আরও দাবি করে, পরে তাকে বন্দুক ঠেকিয়ে স্মেল হুমকি দেয়। বলে, যদি সে হত্যা এবং লুটের ঘটনা প্রকাশ করে তবে তারও পরিণতি পামেলা’র মতোই হবে।
হত্যাকাণ্ডের দিন জেনিফার লং নামের এক মহিলাও শহরটিতে ছিলেন। পরে ২০১৩ সালে বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অভিযোগ করেন, বোলিঙ্গার যে ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন, আদতে সে ঘটনাস্থলের আশেপাশেও ছিল না। কেননা, তার জানামতে বোলিঙ্গার তার বসের সঙ্গে ওই সময় এক গাড়ি নিলাম অনুষ্ঠানে ছিল। ফলে বোলিঙ্গারের পক্ষে আসল সত্যটা জানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়া সেসময় তারই স্কুলের এক শিক্ষিকা জেনিফারকে লিখেছিলেন ঘটনাস্থল দেখে আসা নিনা রেইডফোর্ড সেদিন দোকানের ভেতরে ঢুকে পামেলার মৃতদেহ দেখেছিলেন। অর্থাৎ পুলিশকে মিথ্যে কথা বলেছিলেন নিনা।
এসময় আদালতে কেঁদে ফেলেন জনি স্মেল। বলেন, মিথ্যে অপবাদ মাথায় নিয়ে জীবনের ২৮টি বছর কেটেছে। এখন আমি মুক্ত হয়ে নিজের মতো বাঁচতে চাই।