সুস্থ থাকতে ওষুধ থেকেও বেশি কাজ করে ভ্রমণ
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
বাঙালি মানেই খাদ্য রসিক। বাঙালি মানেই ভ্রমণপিপাসু। তাই তো সারা দুনিয়ায় এই একটা জাতি যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগে ভোগে। বুঝলেন না তো কি বলছি? বাঙালিরা ভাজাভুজি এবং ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার খুব বেশি মাত্রায় খায়। তাই তো একটা বয়সের পর নানা রোগ বাসা বেঁধে বসে এদের শরীরে। অন্যদিকে আমরা ঘুরতেও খুব ভালবাসি। তাই তো আমাদের মধ্যে কারও কারও বয়স সেঞ্চুরি পেরলেও তারা আরাম সে ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারেন।
সবই তো বুঝলান। কিন্তু ঘোরার সঙ্গে দীর্ঘ জীবনের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণার পর একথা প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের শরীরকে নানা রকমের জটিল রোগের হাত থেকে বাঁচাতে ভ্রমণের কোনও বিকল্পই হয় না বললেই চলে। কিন্তু কীভাবে ভ্রমণ আমাদের শরীরকে চাঙ্গা রাখে? সেই উত্তর পেতে গেলে যে একবার চোখ রাখতেই হবে বাকি লেখায়।
১. ভ্রমণ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল করে: একেবারে ঠিক শুনেছেন। বাস্তবিকই ঘোরার সঙ্গে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আসলে নানা ধরনের পরিবেশে ঘুরে বেরনোর সময় আমাদের শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিবডিগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে নানাবিধ রোগের আক্রমণের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, অ্যান্টিবডি হল ছোট ছোট প্রোটিন, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে ভাল রাখতে সাহায্য় করে। এমনকি একাধিক গবেষণায় একথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, হেঁটে হেঁটে ঘুরলে আরও বেশি করে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আসলে এমনটা করলে পরিবেশ উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদানের সঙ্গে শরীর পরিচত হয়ে ওঠে। ফলে রোগের আগেই তাকে কীভাবে আটকানো সম্ভব সে বিষয়ে পরিকল্পনা করে নেওয়ায় সুযোগ পেয়ে যায় আমাদের শরীর।
২. স্ট্রেস লেভেল কমে: একাধিক কেস স্টাডিতে একথা বারং বার উঠে এসেছে যে গত কয়েক দশকে যে সব রোগের প্রকোপ খুব বৃদ্ধি পয়েছে তাদের প্রসারে কোনও না কোনও ভাবে স্ট্রেস বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। তাই তো দীর্ঘ দিন সুস্থ থাকতে আমাদের সবারই মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আর একাজে সাহায্য় করতে পারে ভ্রমণ। কীভাবে? আসলে নানা অচেনা জয়গা ঘোরার সময় আমাদের মন খুশিতে ভরে ওটে। ফলে স্ট্রেস কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় একথা প্রমামিত হয়েছে যে মাত্র তিন দিন ঘুরে এলেই আমাদের স্ট্রেস লেভেল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। আর ভ্রমণের কারণে মনের অন্দরে জমে ওঠা খুশি শেষ হতে কত দিন সময় লাগে জানেন? প্রায় ১৫-২০ দিন। এবার বুঝতে পারছেন তো শরীর ভাল রাখতে কেন ঘোরার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৩. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: নানা জায়গা ঘোরার সময় বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়। সেই সঙ্গে সুযোগ মেলে অচেনা মানুষদের সঙ্গে আলাপ করার। এমনটা করার সময় আমাদের মস্তিষ্কের “কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি” খুব বেড়ে যায়। ফলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বুদ্ধিও বাড়ে। প্রসঙ্গত, জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোসাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে মানুষ যত ঘুরতে থাকে তত তার শিল্পী মন বা ক্রিয়েটিভিটির বিকাশ ঘটে। তাই তো যারা বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাদের মাঝে মধ্যেই ব্যাগ প্যাক করে বেরিয়ে পরা উচিত। এমনটা করলে দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।
৪. ভ্রমণ নানাভাবে হার্টের রোগের আশঙ্কা কমায়: ফ্রেমিংহাম হার্ট স্টাডি অনুসারে যারা বছরে কয়েকবার ঘুরতে বেরন, তাদের নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো কমে যায়। যেমনটা আগেও বলেছি, ভ্রমণের সময় আমাদের স্ট্রেস লেভেল একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ চিন্তাও দূর পালায়। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে। প্রসঙ্গত, মানসিক চাপ বাড়তে থাকলে রক্তচাপও বেড়ে যায়। আর একথা তো সকলেই জানেন যে হার্টের রোগ হওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি দায়ি থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হল ব্লাড প্রেসার।
৫. সার্বিকবাবে শরীর চাঙ্গা থাকে: কোনও জায়গায় ঘুরতে গেলে আমরা কী করি? আজ এখানে, তো কাল সেখানে ঘুরে বেরাই। এমনটা করার সময় আমাদের শরীরের সচলতা খুব বেড়ে যায়। কারণ আমরা কখনও হেঁটে সাইট সিন করি, তো কখনো ভাল ভিউ পাওয়ার প্রচেষ্টায় ট্রেক করি। এতে আমাদের শরীরের প্রতিটি পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগও দূরে পালায়।
৬. শরীরের অন্দরের ক্ষত দূর হয়: পাহাড়ে ঘুরতে গেলে অনেক জায়গাতেই উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে পাওয়া যায়। এই সব প্রস্রবণে স্নান করলে শরীর ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আসলে হট স্পিং-এর জল একাধিক খনিজে পূর্ণ থাকে, যা শরীরকে রোগ মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে কিন্তু ভ্রমণ আমাদের সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. আয়ু বেড়ে যায়: এই তথ্যের মধ্যে সত্যিই কোনও ভুল নেই যে ভ্রমণ আমাদের সুস্থ থাকতে নানাভাবে সাহায্য করে। কারণ ঘুরতে গেলে হার্ট ভাল হয়, স্ট্রেস কমে, ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়, শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে আরও কত যে সুফল পাওয়া যায়, তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই তো আপনাদের কাছে অনুরোধ সুস্থ ভাবে দীর্ঘদিন বাঁচতে, বছরে কম করে দুবার বেরিয়ে পরুন ঘর ছেড়ে। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।