এই গ্রামের ৮ হাজার মহিলা স্বপ্ন দেখেন পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়ার
কলকাতা টাইমস :
রাজস্থানের বান্সওয়ারা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের আদিবাসীদের এক গ্রাম হারেন্দ্রগার্থ। সে গ্রামের মানুষরা একটা বিষয় খুব মেনে চলেন। তাদের বিশ্বাস, যদি পুরুষরা ঘরের শেষ রুটিটা খান তবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। শেষ রুটি বলতে আটার উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে শেষে যে রুটিটা বানানো হয়ে সেটাকে বোঝানো হয়েছে।
অর্থাৎ, রুটির উচ্ছিষ্ট পুরুষদের খাওয়া চলবে না। কাজেই সে খাবারটা মহিলাদের জন্যেই বরাদ্দ। এ নিয়ম পালন করছেন গ্রামের সরলা বারিয়া। মেনেছেন তার শাশুড়ি এবং আদি প্রজন্মের মহিলারা ।
সরলা জানালেন, এ গ্রামের মহিলারা সকালে গরম গরম রুটি বানায়। বাড়ির পুরুষরা খাওয়ার পর যা থাকে মূলত তাই খেতে হয় মহিলাদের । এটা নিয়ম, এটাই বিধি। এখানে এটাই সংস্কৃতি। কিন্তু আধুনিকমনা অনেকেই মহিলাদের পরিবারের সঙ্গে জলখাবার খেতে উৎসাহিত করছেন।
আমলিপাড়া গ্রামের আমুলি ঘারাসিয়া বললেন তার কথা। জানালেন, যখন তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বসে খেতে শুরু করলেন, তখন তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ল। তারা প্রায় সময় খাবার লুকিয়ে তাকে অভুক্ত রাখতো। অনেক রাতই তার না খেয়ে কেটেছে। বললেন, এ নিয়ে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে অনেক ঝগড়া করেছি। কত রাত কেঁদে কাটিয়েছি!
তবে সরলা বা আমুলি এবং তাদের মতো অনেক মহিলা এখনো হতাশ নন। তারা এমন অপসংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে চান। সরকারের হাঙ্গার প্রজেক্টের কল্যাণে বান্সওয়ারা এবং সিরোহি ডিস্ট্রিক্টের ৮ হাজার মহিলা এখন তাদের পরিবারের সঙ্গে একসাথে বসে খাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
ভারতে জনস্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন ডায়ানে কফে। তিনি বলেন, মহিলারা এখনো বাড়িতে নিয়মিতভাবে নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে থাকে। বিশেষ করে যাদের পরিবারের উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে হয় তারা ওজনহীনতায় ভোগেন। এ অবস্থায় যারা গর্ভধারণ করেন তাদের সন্তান স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যায়।
তবে এখন আমুলির স্বামী কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি মাঝে মাঝে খাবার রান্নার সময় স্ত্রীকে এটা সেটা এগিয়ে দেন।