এই ৮ ভারতীয় মহিলার মত নৃশংস গ্যাংস্টার ইতিহাসে খুঁজে পাবেন না
বলিউডের সঙ্গে গ্যাংস্টার দুনিয়ার সম্পর্ক বরাবরের। ‘ব্যান্ডিট কুইন’ (১৯৯৪) থেকে শুরু করে ‘হাসিনা পারকার’ (২০১৭), পর্দায় বাস্তবের গ্যাংস্টারদের ফুটিয়ে তুলেছেন তারকারা। বিশেষত্ব এই, ‘ডি কোম্পানি’ (২০১৩) বা ‘সত্যা’ (১৯৯৮)-এর মতো এই সব ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে কোনো পুরুষ ছিলেন না, বরং ছিলেন এমন কিছু নারী, যাঁরা বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ প্রভৃতি সামাজিক বঞ্চনার শিকার হতে হতে ক্রমেই তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক অথবা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সিন্ডিকেট পরিচালনার দায়িত্বভার।
রিয়্যাল লাইফ ‘দস্যুরাণি’-দের পাশাপাশি বলিউডে মহিলা গ্যাংস্টারদের নিয়ে ফিকশন ছবিও হয়েছে। তার মধ্যে কঙ্গনা রানাউত অভিনীত ‘রিভলভার রানি’ (২০১৪) অন্যতম। কিন্তু পর্দায় পরিচালকের চোখ দিয়ে গ্যাংস্টারদের দেখতে অনেকটাই ঝাঁ চকচকে লাগে। আর সঙ্গে থাকে বলিউডের চিরাচরিত মশলা। সেখানে আবার এই লেডি গ্যাংস্টারদের নাচানাচি করতেও দেখা যায়।
বাস্তবে তাঁরা ঠিক কেমন? ‘মহিলাদের সহনশীল হতে হয়’- এই সব মিথ ভেঙে যাঁরা হাতে পিস্তল বা তলোয়ার তুলে নিতে পিছপা হননি, তাঁদের জীবনটা বাস্তবে কেমন, একবার দেখে নেওয়া যাক।
১. ফুলন দেবী
‘নাম হি কাফি’ হ্যায়। বন্ধুদের দলে কোনো দাপুটে মেয়ে থাকলেই তার নাম সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় ‘ফুলন দেবী’। ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মান ফুলন দেবী। তার পর মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে। শ্বশুরবাড়িতে দিনের পর দিন অত্যাচার। এরই মধ্যে ডাকাতদলের দ্বারা অপহৃত ও ধর্ষিত। সইতে না পেরে পালিয়ে গিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন ফুলন। গোলা-বারুদের মধ্যেই প্রেম আসে ফুলনের জীবনে। কিন্তু সেই প্রেমিককেও বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিতে হয়। তার পরেই বেহমাই গ্রামে নিষ্ঠুর ভাবে একদল রাজপুত গণধর্ষণ করে ফুলন দেবীকে।
প্রতিশোধস্পৃহাই তখন ফুলন দেবীকে ‘ব্যান্ডিট কুইন’ করে তোলে। ২২ জন রাজপুতকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তথাকথিত নিম্নবর্ণদের হয়ে এর পরে একাধিকবার বন্দুক চালিয়েছেন তিনি। তাই ‘লেডি রবিনহুড’ নামেও পরিচিত তিনি। এর পরে টানা ১১ বছর জেলে কাটান। জেল থেকে বেরিয়ে রাজনীতিতেও যোগ দেন তিনি। নির্বাচনে লড়ে সাংসদও হন। এমন সময়েই তাঁর করা হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁকে হত্যা করে শের সিংহ রানা নামের জনৈক যুবক ও তার সঙ্গীরা।
২. সীমা পরিহার
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ডাকাতরা অপহরণ করে। এর পরে ডাকাতদের ডেরায় থেকে সীমা পরিহারও চম্বল উপত্যকার নামজাদা ডাকাত হয়ে ওঠেন। ফুলন দেবীর পথে হেঁটেই মোট ৭০ জনকে খুন করেন, ২০০ জনকে অপহরণ আর ৩০টি বাড়ি লুঠ করেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর পরে জেল থেকে বেরিয়ে ২০০২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। ‘বিগ বস ৪’-এও সীমা পরিহার প্রতিযোগী হিসেবে এসেছিলেন। তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘উনডেড: দ্য ব্যান্ডিট কুইন’ (২০০৭)-এও নিজে অভিনয় করেছেন।
৩. বেলা আন্টি
১৯৭০-এর দশকে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিজের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন এই লেডি গ্যাংস্টার। মুম্বাইয়ের ধারাভিতে তাঁর মদের ব্যবসা এখনো চর্চিত। এতটাই শক্তিশালী ছিলেন, তাঁর ডেরায় মানুষ ঢুকতে ভয় পেতেন।
৪. হসিনা পারকার
সবথেকে বড় পরিচয়, তিনি দাউদ ইব্রাহিমের বোন। ১৯৯১ সালে গ্যাংস্টার অরুণ গাওলির হাতে খুন হন তাঁর স্বামী ইসমাইল পারকার। তখন থেকেই গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ তাঁর। ১৯৯৩ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পরে ভারত ছেড়ে পালিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে বলিউডে ছবিও হয়েছে।
৫. শশীকলা রমেশ পটনাকর
দুধওয়ালি থেকে মাদক পাচারকারী, সেখান থেকেই গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ। প্রায় ১০০ কোটি টাকার গাঁজা, চরস বিক্রি করেছেন। তাঁর মূল কাজই ছিল মধ্যপ্রদেশ আর রাজস্থান থেকে ড্রাগ জোগাড় করে নিজের জন্য সবথেকে ভাল মানের ড্রাগটা রেখে, বাকিটার সঙ্গে ভেজাল ও খারাপ ড্রাগ মিশিয়ে বিক্রি করা। ২০১৫ সালে এক পুলিশ কনস্টেবলকে ড্রাগ পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন ও আটক হন।
৬. জেনাবাঈ দারুওয়ালা
অন্য গ্যাংস্টারদের মতো হিংসা কখনোই ছড়াননি ইনি। খাদ্যদ্রব্য পাচার করা থেকে গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ তাঁর। তবে এক সময়ে পুলিশের হাত থেকে দাউদকে বাঁচিয়েছিলেন। পুলিশের চর হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
৭. রুবিনা সিরাজ সাঈদ
পেশায় হেনা ব্যবসায়ী। কিন্তু তার মাঝেই খাবার ও অস্ত্র পাচার করতেন একদা দাউদ-ঘনিষ্ঠ ছোটা শাকিলের ডেরায়। এই মুহূর্তে শ্রীঘরে রয়েছেন।
৮. সন্তোকবেন জাদেজা
‘গডমাদার’ নামেও পরিচিত। স্বামীও গ্যাংস্টার ছিলেন। অন্য এক গ্যাংস্টারের হাতে খুন হন তাঁর স্বামী। পুলিশের কাছে না গিয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নেন। স্বামীর খুনের সঙ্গে জড়িত ১৪ জনকে নিজে হাতে খুন করেন।