November 25, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

একটা ছোট্ট কাজ আর শেষটাও হবে সুখের/আনন্দের 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

বিরের দোহায় বলা হয়েছিল— যখন তুমি জন্মেছিলে, তখন তুমি কেঁদেছিলে, পৃথিবী হাসছিল। এমন কর্ম করে যাও, যাতে মৃ্ত্যুর সময়ে তুমি হাসতে থাকো আর দুনিয়া কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে। সন্ত কবিরদাস মানুষের সৎকর্মের প্রতিই ইঙ্গিত রেখেছিলেন। কিন্তু আধ্যাত্ম্য-নির্দেশিত সৎকর্ম কি সবাই জীবনে করে উঠতে পারেন? অথবা গভীর কৃচ্ছতায় পূর্ণ সন্ন্যাস কি সংসারের আদৌ কোনও উপকারে আসে, যাতে সংসারকে কাঁদিয়ে নিজে হাসতে হাসতে চলে যাওয়া যায়?

কবিরের এই উক্তির ভিতরেই কোথাও এই প্রশ্নের উত্তর যেন রয়ে গিয়েছে। সেই কথাটি নেহাতই ছোট— হাসি। আদিকালের ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মে অট্টহাসিকে বর্জন করে মুচকি হাসিকে জ্ঞান প্রকাশের অন্যতম প্রধান উপায় বলে মনে করা হত। ‘লাফ’ আর ‘স্মাইল’-এর মধ্যে বিপুল ব্যবধানের কথা ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ব বলত। বৌদ্ধধর্মেও মৃদুহাস্যের বিপুল গুরুত্ব। সেকথা প্রতীয়মান হয়ে রয়েছে ভগবান বুদ্ধের মূর্তিতে। বুদ্ধের মুখের অভিব্যক্তিতে যে ভাব রয়েছে, তা সর্বদাই মৃদুহাস্যের।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী টারা ক্রাফ্ট এবং সারা প্রেসম্যান সম্প্রতি বিস্তারিত গবেষণা করেছেন মৃদুহাসির বিজ্ঞানকে নিয়ে। ১৬৯ জন মানুষের উপরে তারা এক নিরীক্ষা চালান। এই মানুষগুলিকে তারা বিভিন্ন ক্লান্তিকর কাজে নিয়োগ করেন। সেই সময়ে তাদের হৃৎস্পন্দনের হারকে রেকর্ড রাখেন। এদের মধ্যে একাংশকে তারা ঠোঁটে হাসি রেখে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিরীক্ষায় দেখা যায়, তাদের স্পন্দন-হার স্বাভাবিক এবং স্ট্রেস-রেটও বাকিদের তুলনায় কম। সেখান থেকেই সিদ্ধান্তে আসেন তারা— মৃদু হাসি সত্যিই স্ট্রেস কমায়।

নিজের স্ট্রেস কমলে নিজের আয়ু বাড়ে। কিন্তু তাতে সমাজের কী? পরিপার্শ্বের মানুষ কেন তাকে শ্রদ্ধা করবে? এখানেই চলে আসে আধ্যাত্মের প্রসঙ্গ। মৃদু হাসি যে সবথেকে বড় কমিউনিকেশন টুল, তা স্বীকার করে অধিকাংশ ধর্মতত্ত্ব। মনোবিজ্ঞান জানায়, মৃদুহাসির মুখভঙ্গিমা মস্তিষ্কে এমন কিছু স্মৃতিকে সক্রিয় করে তোলে, যা সুখপ্রদ। অর্থাৎ, সুখস্মৃতি ঠোঁটে হাসি ফোটায় না, হাসির ভঙ্গিমাই সুখস্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। সুখস্মৃতি যদি কারোকে বেশিরভাগ সময়ে ঘিরে থাকে, তা হলে তার সামাজিক ব্যবহারেও তার ছাপ পড়বে। প্রসন্ন আচরণে বহু মানুষকে মুগ্ধ করতে সমর্থ হবেন তিনি। এভাবেই সন্ত কবিরের বাণী বাস্তবায়িত হবে। অন্তিম সময়ে ঠোঁটে হাসি নিয়ে যেতে যেতে দেখা যাবে পৃথিবী কাঁদছে তার জন্য।

মনোবিদদের অনুসরণ করলে দেখা যাবে, মৃ্ত্যুর মুহূর্তেও যদি ঠোঁটে হাসি রাখা যায়, তবে সারা জীবনের সুখস্মৃতিই হয়তো ভিড় করে আসবে। তখন কোথায় যন্ত্রণা, কোথায় অপ্রাপ্তির বেদনা! তাই অল্প বয়স থেকে ঠোঁটে হাসি বজায় রাখুন বেশিরভাগ সময়ে। আখেরে কাজে আসবেই।

Related Posts

Leave a Reply