ভস্মে ঘি না ঢালে চীনের ‘শত্রুকে’ বন্ধু করার এই প্রস্তাব !
কলকাতা টাইমস :
কোথায় আছে শত্রুর শত্রু নাকি বন্ধু হয়। এবার এই প্রবাদ বাক্যই কি বাস্তবে ব্যবহার করতে চলেছে মোদী সরকার। চীন যেভাবে আগ্রাসী মনভাব নিয়ে ভারতের সঙ্গে পায়ে-পা দিয়ে যুদ্ধ করতে চাইছে তাতে চীনকে কড়া জবাব দিতে এবার চীনের চরম শত্রু হিসেবে পরিচিত ‘দালাই লামা’কে ব্যবহারের প্রস্তাব দিল ভারতীয় জনতা পার্টির ‘মেন্টর’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ পরিবার (আরএসএস) এর। মোদি সরকারকে সঙ্ঘ পরিবার প্রস্তাব দিয়েছে, চীনকে কড়া জবাব দিতে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হোক তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামাকে।
ভারত সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে দালাই লামাকে ভারতরত্ন সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে। এ প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত।
আমলাদের একাংশের বক্তব্য, ভারত-চীন সংঘাতের আবহে এই প্রস্তাব ভেবে দেখা যেতে পারে। আমলাদের অপর অংশ অনেকটাই সংযত।
তাদের ধারণা, এই পদক্ষেপ আগুনে ঘি ঢালার শামিল। এই সংঘাতের আবহে দালাই লামাকে ভারতরত্ন দিলে, নিশ্চিতভাবেই কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাবে চীন।
১৯৫৯ সালের মার্চের এক রাতে চীনের লাল ফৌজের লালচক্ষু উপেক্ষা করে পথে নেমে পড়েছিলেন দালাই লামা। সঙ্গী বলতে বৃদ্ধা মা, বোন, ছোট ভাই আর তার কয়েকজন কর্মকর্তা। জানতেন না, তার সামনে কী ভবিষ্যত্ অপেক্ষা করছে।
তিব্বতের লাসার পোতালা প্রাসাদ ছেড়ে পথে নেমে পড়া ছাড়া আর কোনো পথ সেদিন খোলা ছিল না ধর্মগুরু দালাই লামার সামনে। তার আট বছর আগেই বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বী স্বাধীন তিব্বতে লাল ফৌজ ঢুকিয়ে দেয় চীন।
তিব্বতের দখল নেওয়ার জন্য শুরু হয় অত্যাচার-নির্যাতন। লাল ফৌজকে রুখতে সেদিন গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দালাই লামা। তাই তিনি টার্গেট হয়ে উঠেছিলেন চীনের।
১৯৫৯ সালের সেই রাতে পথে নেমে না পড়লে চীনের সেনাবাহিনীর হাতে নিশ্চিতভাবেই তাকে প্রাণ হারাতে হতো। হয়তো তার পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পেতেন না।
সেই রাতে লাল ফৌজের পোশাক পরেই পথে নেমেছিলেন দালাই লামা। অনেক ঝড়-পানি, চড়াই-উতরাই, প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিবার, অনুগামীদের নিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে এসে পৌঁছেছিলেন দালাই লামা। পালিয়ে আসার দু’দিন পর জানতে পেরেছিল লাল ফৌজ। তার পরেই তিব্বতে দালাই লামার খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়েছিল তল্লাশি, অত্যাচার।
বন্দুকের মুখে রক্তগঙ্গা বইয়ে তিব্বতকে গায়ের জোরে দখলে নিয়েছিল চীন। দিনটি ছিল ১৯৫৯ সালের ২১ মার্চ। ততদিনে দালাই লামা ঢুকে পড়েছেন ভারত ভূখণ্ডে। ৩ এপ্রিল ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। তার নির্বাসিত সরকারকে জায়গা দেওয়া হয় হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়। তারপর সেখান থেকেই তিব্বত মুক্ত করার দাবিতে চীনবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছেন দালাই লামা। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৯ সালে তিনি পান নোবেল শান্তি পুরস্কার।
আরো কিছু প্রস্তাবও মোদি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। ৬ জুলাই জন্মদিন দালাই লামার। ৮৪ বছরের বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। পূর্ব লাদাখে ভারত-চীন বিতর্কিত সীমানা নিয়ে আলোচনা কতদূর এগোয়, চীন ভারতীয় ভূখণ্ড ছেড়ে যায় কিনা, এসব দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।