৯ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর জানলেন তিনি মেয়ে নয় আসলে পুরুষ
কলকাতা টাইমস :
৩০ বছর পর হঠাৎ করেই পাল্টে গেলো তাদের জগৎ। তাদের পরিবার, এমনকি তারাও এতদিন জানতেন তারা নারী। কিন্তু তিরিশ বছর বয়সে পৌঁছে জানতে পারলেন আদতে তারা মেয়ে নন পুরুষ। দেহে ক্যান্সার বাসা না বাঁধলে সেই সত্য হয়তো জানা সম্ভব ছিল না। তার চিকিৎসকরাও এমন ঘটনাকে বিরল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা ।
শুধু ওই রোগী নন, সন্দেহ হওয়ায় তার ছোট বোনেরও জিন পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। দেখা গিয়েছে, আসলে তিনিও পুরুষ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাস নাগাদ নিউ গড়িয়ার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যান্সার হাসপাতালে বীরভূমের এক রোগী আসেন। বিবাহিতা এবং যথেষ্ট সুদর্শনা। তার তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট সৌমেন দাস এবং ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট অনুপম দত্ত তাকে পরীক্ষা করেন।
তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি মেয়েদের মতোই। গলার স্বর থেকে শুরু করে স্তন সবই মেয়েদের মতো। যোনির গঠনও বহিরঙ্গে নারীসুলভ। বিয়ে হয়েছে ৯ বছর আগে। তবে জন্ম থেকেই তার জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না। পিরিয়ড হয়নি। সিটি স্ক্যানে তার তলপেটে ১৫-১৫ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার পাওয়া যায়।
সৌমেন দাস বলেন, পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার যোনি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি ‘ব্লাইন্ড এন্ডেড’। অর্থাৎ শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের তখন সন্দেহ হয়। রোগীর ‘কেরিওটাইপিং’ অর্থাৎ ক্রোমোজোম পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তার শরীরের কম্বিনেশন হল ‘XY’ ক্রোমোজোম, যা পুরুষদের থাকে। নারীদের শরীরে থাকে XX ক্রোমোজোম।
চিকিৎসকরা আরো জানান, ওই রোগীর তলপেটের টিউমারটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি আসলে অণ্ডকোষ। যা শরীরের বাইরের বদলে তার শরীরের ভেতরে রয়েছে। বায়োপসি করে টিউমারে ক্যান্সার মেলে।
অনুপম দত্ত বলেন, পুরুষদের যে ক্যান্সার হয়, এটি সেই ধরনের টেস্টিকিউলার ক্যান্সার। একে চিকিৎসার পরিভাষায় সেমিনোমা বলা হয়। ওই রোগীর এখন ২১ দিন অন্তর কেমোথেরাপি চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তা হলে প্রশ্ন ওঠে, বহিরঙ্গে তিনি কী করে মেয়েদের মতো?
সৌমেন দাস জানান, ওই রোগীর ‘টেস্টিকিউলার ফেমিনাইজেশন সিনড্রোম’ রয়েছে। তার অণ্ডকোষ যেহেতু শরীরের ভেতরে ছিল এবং সুগঠিত ছিল না, তাই পুরুষ হরমোন ‘টেস্টোস্টেরন’ ঠিকভাবে ক্ষরণ হয়নি। বরং তার দেহে নারীদের হরমোন তুলনামূলক বেশি ছিল। তাই তার দেহ একেবারে নারীর মতো।
চিকিৎসকরা জানতে পারেন, ওই রোগীর একমাত্র বোনেরও জন্ম থেকে জরায়ু ও ডিম্বাশয় নেই। বোনেরও কেরিওটাইপিং করেন। দেখা যায়, তার শরীরেও ‘XY’ জিনের কম্বিনেশন। তারও দেহের ভিতরে অণ্ডকোষ রয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, অণ্ডকোষের কথা আগে জানা গেলে ওটা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া যেত। তা হলে ক্যান্সার পর্যন্ত গড়াত না। তাই এখন ওই রোগীর বোনের অণ্ডকোষ অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, ওই রোগীর দুই খালাম্মার একই সমস্যা ছিল। এমনিতে নারী বলে মনে করা হলেও তাঁদের জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা তেমন হয়নি বলে জিনগতভাবে তারা কী ছিলেন, জানা যায়নি।
ওই রোগীর বোন জানান, কৈশোরে যখন আমাদের পিরিয়ড হলো না, তখন ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, আমাদের ওভারি আর ইউটেরাস নেই, ফলে কোনো দিন সন্তান হবে না। সেটা জানিয়েই বোনের বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কখনো কেউ বলেননি যে, আমরা আসলে মহিলাই নই, বা আমাদের শরীরের ভিতরে অণ্ডকোষ রয়েছে।