মেয়েরা কি এতই বিধ্বংসী যে তাদের নামেই ঝড়, নাকি …
কলকাতা টাইমস :
সম্প্রতি আমপানের তান্ডবে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গের বহু এলাকা। এর পরেই আশংকা করা হচ্ছিল গতি আসার ভয়। কিছুদিন ধরে ধরণীর ওপর বয়ে যাওয়া কয়েকটি ঘুর্ণিঝড়ের নামগুলো একটু পর্যবেক্ষন করলেই বোঝা যায়, তা রাখা হয়েছে নারীদের নামে৷ যেমনঃ লায়লা, আইলা, ফনি, আমফান, গতি ইত্যাদি ৷
প্রত্যেকটি নামই মেয়েদের নাম৷ তাই অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, যে মেয়েরা কি এতই বিধ্বংসী? নাকি ইচ্ছা করেই এমন নাম দেওয়া হচ্ছে ?
এ প্রসঙ্গে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ঘুর্ণিঝড়ের উৎপত্তি কেন হয়?
সাগরের জলরাশির ঠিক উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কোন কারণে যদি বেড়ে যায়৷ তাহলে হালকা গরম বাতাস দ্রুতগতিতে উপরে উঠে যায় এবং ওই শূন্যস্থানটির বায়ুচাপ কমে যায়৷ তখন চারপাশ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বাতাস এসে জায়গাটি পূরণ করে৷ এই বাতাস কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ওই শূন্য স্থানে আসে৷
ভারী বাতাসের নিচের দিকের এ গতিপ্রবাহকে নিম্নচাপ বলে৷ এই নিম্নচাপ সময়ের সাথে সাথে শক্তি সঞ্চয় করে৷ ক্রমান্বয়ে তা ভয়ংকর শক্তি পেয়ে কোন একদিকে চলতে শুরু করে৷ সাইক্লোনের বাতাস উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে চক্রাকারে কেন্দ্রের চারদিকে প্রবাহিত হয়৷
কেন নারীর নামে নাম-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর আবহাওয়াবিদরা গ্রীষ্ণ মন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিতে শুরু করেন মেয়েদের নামে৷ তবে এই নামকরণ আনুষ্ঠানিক কোন ব্যাপার ছিল না৷ ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সময়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সাইক্লোনের নাম দেয়া হয় ফোনেটিক হরফ ব্যবহার করে৷
যেমন এবেল, বেকার, চার্লি ইত্যাদি৷ মার্কিন বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের স্ত্রী এবং বান্ধবীদের নামেও এই ঝড়গুলোর নামকরণ করতেন৷ অবশ্য পরে মার্কিন আবহাওয়াবিদরা পুরুষের নামেও কিছু ঘুর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিলেন৷ বিংশ শতাব্দীতে এক অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়াবিদ সাইক্লোনের নামকরণ করতেন তার অপছন্দের রাজনীতিবীদদের নামে৷
বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, ১৯৪৫ সাল থেকে উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সৃষ্ট ঝড়ের নামকরণ শুরু হয় নারীর নামে৷ তবে বাদ পড়েনি পুরুষরাও৷ তাদের নামে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে৷ এরপর বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বা ডব্লিউ.এম.ও ঝড়ের নামকরণ একটু ভিন্ন ধারায় করতে শুরু করে৷ এই নামগুলো বেশিরভাগ ফুল, পশু-পাখি, গাছ এবং খাবারের নামে দেয়া হয়৷ কিন্তু মানুষের মনে দাগ কেটে যায়, নারীর নামে রাখা ঝড়গুলোই৷
প্রসঙ্গত, সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কুকলস থেকে৷ এর অর্থ ‘‘কুণ্ডলী পাকানো সাপ”৷ বৃটিশ আমলের দক্ষিণ উপমহাদেশীয় আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক ড. হেনরি পিডিংটন এর লেখা ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত ‘‘দি সেইলরস হর্ন বুক ফর দি ল অফ স্টর্মস” বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷