November 25, 2024     Select Language
৭কাহন KT Popular

শিশু বয়েসে সিংহাসনে বসে ইতিহাস বদলে দিয়েছিলেন এরা 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

পৃথিবীর সব শিশুই কোনো না কোনো সময় রাজা-রানি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিংবা এমনটা সেজে খেলা করে। কিন্তু সে স্বপ্ন এক সময় মিলিয়ে যায়। কিন্তু যারা বাস্তব জীবনে সত্যিকার অর্থেই রাজা-রানি হয়েছিলেন, তাদের ইতিহাসটা কেমন? এমন কিছু অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য ও বোকা বনে যাওয়ার মতো ঘটনা জেনে নিন। বেশ কয়েকজন শিশু আছে, যারা একটা সময় বিশাল সাম্রাজ্যের রাজা বা রানি বা সম্রাট বা জার হয়ে উঠেছিলেন।

১. মেরি : তিনি কুইন অব স্কটস। অভিশ্বাস্য হলেও সত্য, মাত্র ৬ দিন বয়সে তিনি রানি বনে যান। ফ্রান্সে মায়ের আদরে বড় হতে থাকেন। তবে ১৮ বছর বয়স থেকে সত্যিকার অর্থেই স্কল্যান্ডের শাসনভার নিজেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে থাকেন। তবে ঘটনা খারাপের দিকে যেতে থাকে। স্বামীর হত্যাকারী সন্দেহ করা হয় এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। পরে ইংল্যান্ড চলে যান। সেখানে তার কাজিন কুইন এলিজাবেথ প্রথম এর কাছে চলে যান যেন নিরাপত্তা মেলে। কিন্তু সেখানে বন্দিদশা কাটে তার। পরে এলিজাবেথকে খুন করতে চান এমন এক ঘটনায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় তাকে। অবশেষে ৪৪ বছর বয়সে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

২. রাশিয়ান জার ইভান : ১৫৩৩ সালে বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৩ বছর বয়সে ইভানকে মস্কোর প্রিন্স ঘোষণা করা হয়। কয়েক বছর বাদে তার মা মারা যান। এতে করে ইভান অনাথ হয়ে পড়েন এবং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় একদল এলিটের হাতে যারা বয়ার্স নামে পরিচিত ছিলেন। তারা কম বয়সী ইভানের মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঘটান। ইভান ক্ষুধার্ত, ক্ষুব্ধ ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বড় হতে থাকেন। ১৬ বছর বয়সে বয়ার্সদের সঙ্গে এক সভা ডাকেন। সেখানে এক বয়ারকে ক্ষুধার্ত কুকুরের মাঝে ছুঁড়ে ফেলেন। তার এই কাজটি ছিল কর্তৃত্ব প্রদর্শনের দারুণ কার্যকর পদ্ধতি। জার হয়ে ওঠেন ইভান। পরে বিভিন্ন ঘটনায় অত্যাচারী হিসাবে বেশ নাম কামান তার ৩৭ বছরের শাসনামলে। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু ঘটে ১৫৮৪ সালে।

৩. পোপ বেনেডিক্ট নবম : তিনি ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ পোপ। তাকে ‘নরকের দানব’ বলে ডাকা হতো। ১০৩২ সালে তিনি পোপ হন ১২ বছর বয়সে। সেই সময় পোপরা কেবল চার্চের প্রধান ছিলেন তাই নয়, তারা পাপাল স্টেট নামের ভূখণ্ডের শাসনকর্তাও ছিলেন। তার সম্পর্কে খুব বেশি না জানা গেলেও তিনি যে কারো কাছে প্রিয় ছিলেন না তা স্পষ্ট। ইতিহাসবিদ ফার্দিনান্দ গ্রেগোরোভিয়াস তাকে ‘নরকের দানব’ বলে মন্তব্য করেছেন। ভ্যাটিকান থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে তিনি দুই বার পোপ হয়েছিলেন।

৪. কিং ওয়ো : এখন তিনি উগান্ডার রাজা। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ রাজা। তিনি উগান্ডার টরো সাম্রাজ্যের প্রধান। ১৯৯৫ সালে মুকুট ওঠে মাত্র ৩ বছর বয়সে। রাজা হওয়ার সময় তিনি ছোটখাটো একটি সিংহাসনে বসে পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। এখন তরুণ তিনি।

৫. কুইন ইসাবেলা : ১৮৩৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর ৩ বছর বয়সে রানি ঘোষণা করা হয় তাকে। কিন্তু অনেক স্প্যানিয়ার্ড তার কাকা কার্লোসকে রাজা হিসাবে চাইতেন। তার অনুসারীরা একজন মহিলাকে সিংহাসনে দেখতে চাননি। এতে করে এক যুদ্ধের সূচনা হয় যা কার্লিস্ট ওয়ার্স নামে পরিচিত। অফিসিয়ালি ইসাবেলাকে ১৩ বছর বয়সে রানি ঘোষণা করা হয়।

৬. ক্রিস্টিনা : ৬ বছর বয়সে সুইডেনের রানি হন ক্রিস্টিনা। বাবার মৃত্যুর পর অফিসিয়ালি রাজ্যভার গ্রহণ করেন ১৮ বছর বয়সে। এর মাঝে তাকে বড় করা হয়েছে ছেলে সাজিয়ে। বুদ্ধিমত্তার জন্য সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। রানি হওয়ার পর প্রতিদিন ভোর ৫টায় উঠতেন পড়ার জন্য। ১৬৫৪ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে গোটা বিশ্বকে চমকে দেন। পরে রোমে চলে যান।

৭. পুইয়ি : ১৯০৮ সালে চাইনিজ সম্রাট হিসাবে নাম ঘোষিত হয় তার। তখন বয়স মাত্র ২ বছর। তিন বছর পর বিপ্লবের মাধ্যমে রাজার রাজ্যপাট বিলুপ্ত করা হয়। গঠিত হয় রিপাবলিক অব চায়না। তিনি রাজ্য হারান। তবে বেইজিংয়ের এক নিষিদ্ধ শহরে বিলাসবহুল জীবনযাপনের অধিকার দেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। জাপানে চলে যান। জীবনে পরের সময়গুলো খারাপ কেটেছে তার। জাপানের নিয়ন্ত্রিত চীনের এক রাজ্যের পুতুল সম্রাট বানানো হয় তাকে। পরবর্তিতে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে জেলে দেওয়া হয় তাকে। এক যুগ পর ছাড়া পান এবং বেইজিংয়ে একটি বাগানের মালি হিসাবে কাজ করেন।

৮. সুলতান মুরাদ চতুর্থ : ১৬২৩ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সম্রাট বনে যান ১১ বছর বয়সে। সরকারবিরোধীদের দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তার বিরুদ্ধে লোক সমাগম যেন না ঘটে সে জন্য কফি ও মদের দোকানগুলো বন্ধ করে দেন। তার শাসনামলে ভয়ংকর কাণ্ড ঘটিয়েছেন।  মহিলাদের এক নৃত্য অনুষ্ঠানে আসেন তিনি এবং সব নৃত্যুশিল্পীর শিরশ্ছেদের নির্দেশ দেন। শত্রু রাজ্য পার্সিয়ার গান গাওয়ার জন্য তার প্রধান গায়কের মুণ্ডু কাটেন তিনি।

৯. রাজা তুত : তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে খ্যাতিমান শিশু শাসক। ১৩৩৩ অব্দের দিকে তুতেনখামেন তার ক্ষমতা বিস্তৃত করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সেই এমনটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। এর ১০ বছর বাদেই মারা যান তিনি। কিন্তু কি কারণে তার মৃত্যু ঘটে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তিনি তার জীবদ্দশার চেয়ে মৃত্যুর কারণে বেশি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯২২ সালে তার খুঁজে পাওয়া সমাধি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরাতত্ত্বের নিদর্শন হিসাবে গণ্য করা হয়।

১০. হেনরি ষষ্ঠ : তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী শাসক। মাত্র ৯ মাস বয়সে ১৪২২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা ঘোষিত হন। যখন নিজে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা শুরু করেন, তখন দুটো রাজপরিবার ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম করে যাচ্ছে। একটি পরিবার দ্য ল্যানকাস্টার্স (হেনরির নিজের বংশ) এবং ইয়োর্কস। এই সংগ্রাম ‘ওয়ার অব রোজেস’ হিসাবে পরিচিত হতে থাকে। অবশেষে হেরে যায় হেনরির পরিবার। পরে তাকে বন্দি করা হয় এবং ৫০ বছর বয়সে টাওয়ার অব লন্ডনে তাকে হত্যা করা হয়।

Related Posts

Leave a Reply