রবীন্দ্রনাথের দাদার এই কেলেঙ্কারি শুনলে ভিমরি খাবেন
অবশ্য ব্রিটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যাংক কারচুপির নজির আছে। এমনকি এই তালিকায় আছেন এমন এক মানুষ, যাকে ইংরেজ আমলে বাংলার প্রিন্স হিসেবেই চিনে থাকেন বাঙালিরা। এমনই কিছু ব্যাংক কারচুপির ঘটনা নিয়ে পরিবর্তনের এবারের আয়োজন।
এনরন কেলেঙ্কারি
আমেরিকায় আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ উঠলেই চলে আসে এনরন কর্পোরেশনের নাম। কেনথ লে’এর প্রতিষ্ঠিত এনরন ১৯৮৫ সাল থেকে আমেরিকাতে ব্যবসা করে আসলেও নব্বই দশকে হঠাই ফুলে ফেঁপে ওঠে। মাত্র ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার থেকে ১০ কোটি ৮ লাখে দাঁড়ায়। কুশীলব হিসেবে নেপথ্যে থাকা সংস্থাটির প্রধান জেফ্রি স্কিলিং দাবি করেছিলেন কোনো দৃশ্যমান সম্পদ ছাড়াই আয় বৃদ্ধির এক নতুন পদ্ধতি তারা আবিষ্কার করেছেন।
ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি ও বাণিজ্যিক সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য দেখে অসংখ্য মানুষ এর শেয়ার কিনে ভাগ্যবান বোধ করেন। কিন্তু কারচুপির চরম দৃষ্টান্তে বেথানি ম্যাকলিওন নামের প্রতিষ্ঠানটির এক হিসাব কর্মকর্তা সত্য প্রকাশ করলে চিত্র পাল্টে যায়। মানুষের মনে এমনিতেও সন্দেহ ছিল, এর উপর বেথানি জানিয়ে দেন এনরন মূলত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম মেনে পরিকল্পিত হিসাবের কারসাজি’এর মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে শেয়ার বাজারে ছেড়েছে। আদতে প্রতিষ্ঠানটি কোনো কাজ না করেই একটির পর একটি কোম্পানি খুলে যাচ্ছে। আর উচ্চ মূল্যে সেগুলোর শেয়ার বিক্রি করে বাড়তি আয় দেখাচ্ছে। ফলে ২০০১ সালে লাখ লাখ শেয়ারহোল্ডারকে পথে বসিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষণা করে। যে সংস্থাকে মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফরচুন’ টানা ৬ বছর আমেরিকার সেরা আবিষ্কারধর্মী প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করে আসছিল।
ওয়ার্ল্ডকম কেলেঙ্কারি
টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ওয়ার্ল্ডকম নকল অ্যাকাউন্টিং এন্ট্রির মাধ্যমে সম্পদের আকার বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার দেখায়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ জালিয়াতির গন্ধ পেলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও বার্নি এবারস’এর আর্থিক কারচুপির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ফলে ওয়ার্ল্ডকম দেউলিয়া হয় আর এবারস যান জেলে! মাঝে লাখ লাখ মানুষ তাদের শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ হারান।
স্যাডলার কেলেঙ্কারি
শুধু নব্বইয়ের দশকেই নয়, উনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকেও পশ্চিমে এমন ব্যাংক কেলেঙ্কারির নজির আছে। ইংল্যান্ডের আইন প্রণেতার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে জন স্যাডলার যে আর্থিক কারচুপি করেছিলেন তাতে সেবার পথে বসতে বাধ্য হয় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এবং ব্রিটিশ নাগরিক। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে রেলপথ নির্মাণে অর্থায়ন ছাড়াও তিনি টিপ্পেরারি নামক ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। কিন্তু ভুয়ো হিসাব দেখিয়ে স্যাডলার ব্যাংক থেকে প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করেন। যার সবই ছিল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর সাধারণ মানুষের। তবে ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে ব্যাংক তো দেউলিয়া হয়ই স্যাডলার নিজেও অপমান ও কারাবাস থেকে বাঁচতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
ইউনিয়ন ব্যাংক কেলেঙ্কারি
কলকাতার সুবিদিত জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮২৯ সালে তৈরি করেন ইউনিয়ন ব্যাংক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে চাকরি করার সুবিধার্থে ব্যাংকের অংশীদার পরিচয় দিলেও কর্তৃত্ব ছিল তার হাতেই। ব্যাংকের ক্ষমতা নিজের হাতে রাখার জন্য তিনি তার ঘনিষ্ঠ ও আজ্ঞাবহ রমানাথ ঠাকুরকে ব্যাংকের কোষাধ্যক্ষ বানান।
সেই আমলে ১৬ লক্ষ টাকা মুলধন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদার ব্যাংকটি যাত্রা করলেও মাত্র ৩ বছরের মধ্যে তা ১ কোটিতে দাঁড়ায়। হুন্ডি লেনদেন তখন বৈধ থাকায় এর মাধ্যমে দ্বারকানাথ ও নীলকরেরা সুবিধা ভোগ করতে থাকেন। কিন্তু ১৮৪৩ সালে অডিটে এসব ধরা পড়লে ব্যাংকের মুলধনের দুই তৃতীয়াংশই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। খেলাপি ঋণের ৭৩ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৮ লক্ষ ছিল দ্বারকানাথ ঠাকুরের কোম্পানির। এক পর্যায়ে দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্যাংকের ৭শ’ শেয়ারের মধ্যে সাড়ে ৬শ’ শেয়ার বিক্রি করে দেন। এরপর অসংখ্য ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে ১৮৪৬ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়।