সাজতে ভালোবাসেন, সাবধান, হতে পারে কিডনির সমস্যা ও ক্যানসার
সভ্যতার প্রায় আদি সময় থেকেই মানুষ নিজেকে সাজিয়ে তুলতে বিভিন্ন রকম প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির রমরমায় মেকআপ অ্যান্ড বিউটি এখন শিল্প। বিজনেস ওয়্যারের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই সারা বিশ্বে কসমেটিক্স মার্কেটের ব্যবসা ছুঁয়েছিল ৪৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
২০১৫ সালে ইউটিউবে শুধুমাত্র বিউটি সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল ১২ কোটিরও বেশি। নিজেকে সাজিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা পেরিয়ে মেকআপ যখনই অবসেশন বা মানসিক নির্ভরশীলতার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে সেখানেই বাড়ছে বিপদ।মেকআপ থেকে সাবধান, হতে পারে কিডনির সমস্যা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত । ফাউন্ডেশন, সেটিং পাউডারের মতো প্রডাক্টে এমন কিছু রাসায়নিক থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
ত্বকের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় শুষ্ক ভাব, অ্যালার্জি যেমন হতে পারে, তেমনই কিছু কিছু টক্সিক রাসায়নিক ত্বকের গভীরে গিয়ে রক্তে প্রবেশ করলে তার থেকে হতে পারে বড়সড় শারীরিক সমস্যাও।
ব্রেস্ট ক্যানসার ফান্ডের দ্য ক্যাম্পেন ফর সেফ কসমেটিক্স প্রকল্পের রিপোর্ট বলছে, স্তন্যদায়ী মায়েদের ব্যবহার করা পাউডার থেকে সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরাও। কসমেটিক্সে থাকা যে রাসায়নিকগুলো সম্পর্কে সাবধান করেছে বিসিএফ।
ক্যা়ডমিয়াম
নরম, নীলাভ-সাদা এই ধাতু থেকে কিডনির সমস্যা, হাড়ের অসুখ, এমনকী ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট করে দেওয়া পরিমাণের অনেক নীচেও ক্যাডমিয়াম শরীরের জন্য টক্সিক হতে পারে। এস্টি লডার, জাফরা কসমেটিক্স, ল’রিয়েল, ইভস রশার, রেভলন, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, মেরি কে ও জেন অ্যান্ড কো-এর মতো বিখ্যাত ব্রান্ডের পাউডার আইশ্যাডো, ক্রিম আইইশ্যাডো, আই প্রাইমার, ফাউন্ডেশনের মতো প্রডাক্টে ক্যাডমিয়ামের মাত্রা চিন্তায় ফেলেছে গবেষকদের।
টলুইন
নেল পালিশে পেইন্ট-থিনার হিসেবে টলুইন ব্যবহার করা হয়। যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে ডিমেনশিয়ার মতো বড় সমস্যা পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। নেইল প্রডাক্টের পাশাপাশি কিছু হেয়ার ডাই-তেও টলুইন থাকে। মাস্কারা, আইশ্যাডো, ব্লাশ, ফাউন্ডেশনেও বিভিন্ন টক্সিক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বেঞ্জোফেনন
সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রডাক্টে বেঞ্জোফেনন ব্যবহার করা হয়। ডার্মাটাইটিসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বেঞ্জোফেনন থেকে ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। লিপ বাম, ফাউন্ডেশন, নেল পালিশ, ফ্র্যাগরেন্স, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার স্প্রে, বেবি সানস্ক্রিনে বেঞ্জোফেনন থাকে।
প্যারাবেন
কসমেটিক প্রডাক্টে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখতে প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্যারাবেন এন্ডোক্রিন হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। পারফিউম ও কোলনে সাধারণত ব্যবহার করা হলেও শাওয়ার জেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও কিছু লোশনেও প্যারাবেন থাকে। এই রাসায়নিক স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
লেড
প্রচুর মেকআপ প্রডাক্টে এই ভারী ধাতু থাকে। বিশেষ করে যে সব প্রডাক্টে পিগমেন্ট থাকে। যেমন ফাউন্ডেশন, আইশ্যাডো, লিপস্টিক, আইলাইনার। লেড অত্যন্ত টক্সিক। এই লেড যখন রক্তে মেশে তা স্নায়ুর সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এমনকী ক্যানসারেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে লিপস্টিক, লিপ গ্লস ও লিপ লাইনারে সবচেয়ে বেশি লেড থাকে। এ ছাড়াও হেয়ার ডাই, মাস্কারা, আইশ্যাডো, ব্লাশ, ফাউন্ডেশনেও লেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেবি পাউডার ও লোশন ছাড়া সব মেকআপ প্রডাক্টেই সামান্য পরিমাণ হলেও লেডের উপস্থিতি থাকে।
ট্যাল্ক
পাউডার মেকআপ, প্রেসড পাউডার ফাউন্ডেশন, ব্লাশ ও লিক্যুই়ড ফাউন্ডেশনে এই মিনারেল ব্যবহার হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময়ই এই মিনারেল অ্যাসবেসটসের মতো কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ট্যাল্ক জরায়ুর ক্যানাসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বেবি পাউডার, ডিওডরান্ট, ফেমিনিন হাইজিন প্রডাক্ট, পাউডারড আইশ্যাডো ও ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, ফেসমাস্কে ট্যালক থাকে।