এই বাঙালি ছিলেন বলেই ট্রেনেও আজ প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে পারছেন, নচেৎ ….
কলকাতা টাইমস :
দূরান্তে ট্রেন সফরের মাঝে বাথরুমে গিয়ে নিজেকে হালকা করে নেওয়ার সময়ে কখনও ভেবে দেখেছেন, ট্রেনে যদি বাথরুমটা না থাকত, তা হলে আপনার কেমন কাপড়ে-চোপড়ে হত?
একশো সাত বছর আগে ঠিক এমনই অবস্থা হয়েছিল এক বাঙালির। ১৯০৯ সালের সেই ঘটনাই ট্রেনে বাথরুম চালু করতে বাধ্য করেছিল রেলকে। ট্রেনে সফরের সময়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হয়ে আহমেদপুর স্টেশনের শৌচালয়ে যান অখিলচন্দ্র সেন। কিন্তু শৌচালয়ে থাকার সময়েই গার্ড ট্রেন ছাড়ার জন্য হুইসেল বাজান। ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে দেখে কোনওক্রমে শৌচালয় থেকে বেরিয়ে ট্রেন ধরতে ছোটেন অখিল। নিজের জিনিসপত্র একহাতে নিয়ে এবং অন্যহাতে কোনওক্রমে ধুতি সামলে দৌড়তে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্ল্যাটফর্মের উপরে পড়ে যান অখিল। প্ল্যাটফর্ম-ভর্তি লোকের সামনে ধুতি খুলে গিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন তিনি। লজ্জায়, অসম্মানে স্টেশন ছাড়েন অখিল।
রেলের উপরে প্রবল ক্ষোভে এর পরেই সাহেবগঞ্জ ডিভিশনাল রেলওয়ে অফিসে চিঠি পাঠান অখিলচন্দ্র সেন। সেখানে শুরুতেই তিনি লিখেছেন, পেট ভরে কাঁঠাল খেয়ে ট্রেনে যাওয়ার সময়ে পেট ফেঁপে ওঠার ফলে আহমেদপুর স্টেশনে বাধ্য হয়ে শৌচালয়ে যান তিনি। গোটা চিঠিতে ইংরেজি ব্যাকারণগত ভুল থাকা এই চিঠিটি সাধারণ পাঠকের জন্য যথেষ্ট হাস্যকর হলেও চিঠিটিতে একজন সাধারণ রেলযাত্রীর যন্ত্রণা ফুটে উঠেছিল। সেই চিঠিতে তিনি প্রশ্ন করেন, তিনি যখন শৌচকর্ম করতে গিয়েছিলেন, তখন কি ট্রেন ছাড়ার আগে গার্ড কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে পারতেন না? এমনকী, জনস্বার্থে ওই গার্ডের থেকে বড়সড় জরিমানা আদায়ের দাবি করেন তিনি। অন্যথায় সংবাদপত্রে খবর দিয়ে এই ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
অখিলচন্দ্র সেনের এই চিঠিটি রেলের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ওই চিঠির ভিত্তিতেই গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রেল চালু হওয়ার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে ট্রেনের মধ্যে বাথরুমের প্রচলন হয়। অখিলচন্দ্র সেনের সেই চিঠি এখনও দিল্লির রেল মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে।