এই গ্রামে বিধবা হওয়া মানা, তাই..
কলকাতা টাইমস :
সমাজে কোনো বিধবা থাকবে না। প্রয়োজনে নাতি বিয়ে করবে ঠাকুরমাকে, দেওর বৌদিকে। এরকমই অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত মধ্যপ্রদেশের গোন্ড সম্প্রদায়ের মধ্যে। এই জনজাতির বাস মূলত মধ্যপ্রদেশের মান্ডলা জেলায়। তাদের প্রচলিত রীতি হল‚ একজন স্বামীহীনা হলে তার শ্বশুরবাড়িতে আর একজন যে অবিবাহিত পুরুষ আছে সে তাকে বিয়ে করবে। যদি দেখা যায়‚ নাতি ছাড়া কোনও পুরুষ অবিবাহিত নেই‚ তাহলে নাতির সঙ্গেই হবে ঠাকুরমা-দিদিমার বিয়ে।
ওই এলাকার পাতিরাম ওয়াড়খেড়। তার যখন ৬ বছর বয়স তখন মারা যান দাদু । এদিকে বাড়িতে আর কোনও অবিবাহিত পুরুষ নেই। তখন ৬ বছরের পাতিরামের সঙ্গে বিয়ে হল বৃদ্ধা ঠাকুরমার । বলাই বাহুল্য, এখানে শারীরিক সম্পর্কের অবকাশ থাকে না। কিন্তু ঠাকুরমাকে বিয়ে করে নাতি হয়ে যায় পরিবারের কর্তা। এই বিয়েকে বলা হয় ‘নাতি পাতো‘। পাতো হল এক বিশেষ ডিজাইনের রুপার বালা। সেই বালা ঠাকুরমাকে পরিয়ে দেয় নাতি। ব্যস দাদি হয়ে গেল তার স্ত্রী।
যৌবনে পৌঁছে পাতিরাম ফের বিয়ে করেছেন। গোন্ড সমাজ এই বিধানও দিয়েছে। যদি কোনও ছেলেকে অল্প বয়সে বিয়ে করতে হয়‚ তবে যৌবনে পৌঁছে সে আবার বিয়ে করতে পারবে। তবে যতদিন প্রথম বৌ থাকবে‚ দ্বিতীয় বৌ সংসারে থাকবে সতীন হিসেবে। যেমন ছিল পাতিরামের দ্বিতীয় বৌ। নিজের স্বামীর ঠাকুরমার সতীন করে।
নাতি-ঠাকুরমার বিয়েতে দৈহিক সম্পর্ক না থাকলেও তা গৌণ নয় দেওর-বৌদির বিয়েতে। যাকে বলে ‘দেবর পাতো’। যখন বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে বৌদির হাতে রুপার বালা বা পাতো পরিয়ে দেয় দেওর। যেমন দিয়েছিলেন সম্পত কুরওয়াড়ি। নিজের চেয়ে ১০ বছরের বড় বৌদির হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন ওই বালা। যতক্ষণ না তিনি সম্মত হচ্ছিলেন ততক্ষণ গ্রামের প্রধানরা যোগ দেননি সম্পতের বড় ভাইয়ের পারোলৌকিক ক্রিয়া কর্মে।
কিন্তু যদি পরিবারে একান্তই না থাকে অবিবাহিত পুরুষ? অথবা যদি রাজি না হন বিধবা নিজে? তাহলেও আছে বিধান। তখন গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ওই মহিলাকে দেওয়া হয় রুপার বালা। হলেন তিনি ‘পঞ্চ পাতো’। তবে থাকতে পারবেন একা‚ নিজের মতো‚ অথচ সধবা বিবাহিতা নারী হিসেবেই।
শুধু নিজেদের গ্রামে সীমাবদ্ধ নয়। গোন্ডরা এ রীতি পালন করেন যখন অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত হন‚ তখনও। এমনকী‚ এরকম উদাহরণও আছে‚ ভোপালে ইঞ্জিনিয়ার‚ কিন্তু গোন্ড সমাজের রীতি মেনে পাতো প্রথা গ্রহণ করেছেন। এই তথ্য সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন সেই গোন্ড সমাজের প্রধান‚ যে আদি জনজাতি কোনও মেয়েকে দেখতে চায় না বৈধব্যের বেশে। নিজেদের অভিধানে রাখতে চায় না স্বামীহীনা কথাটি।