সাবধান ২৯, ৩৯, ৪৯ নাকি প্রতারণার বয়স?
কলকাতা টাইমস :
আপনি যাকে ভালোবাসেন তিনি আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করছেন এবং অন্য কারো সঙ্গে যৌনতার মতো অন্তরঙ্গ সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন এ ধরনের ধারণা আবেগতভাবে ধ্বংসাত্মক ফল বয়ে আনতে পারে। জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে রেহাই পেতে বিভন্ন নিদর্শন এবং সতর্কতা সংকেতগুলোর প্রতি খেয়াল রাখাই সবচেয়ে স্বাভাবিক উপায়।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৯ বছর বয়সে এসে লোকে তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে প্রতারণার দ্বিগুণ প্রবণতা প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া প্রতি দশকের শেষ বছরগুলোতে লোকের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক জড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়। যেমন ২৯ বা ৪৯ বছর বয়সে এই প্রবণতা বেশি থাকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট ইলিসিটএনকাউন্টারডটকম এর এক গবেষণা থেকে এই তথ্য বের হয়ে এসেছে।
যৌন অবিশ্বস্ততা সম্পর্কিত অন্যান্য গবেষণায়ও কি একই দাবির সত্যতার প্রতি সমর্থন রয়েছে?
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, লোকে তাদের বয়সের প্রতি দশকের শুরুতেই একটু ভিন্নভাবে আচরণ করেন। ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যাডাম এল অল্টার এবং হল ই হার্শফিল্ড ৬টি গবেষণা চালান। গবেষণাগুলোতে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের বয়সের প্রতি দশকের নবম বছরে কী ধরনের আচরণ করে এবং বিবাহবহির্ভুত যৌন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কতটা বেশি প্রবণতা প্রদর্শন করে তা অনুসন্ধান করা হয়।
গবেষণাগুলোতে ইলিসিটএনকাউন্টার এর মতোই আরেকটি অনলাইন ডেটিং সাইট থেকে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। সাইটটির ইউজাররা ইতিমধ্যেই একগামী সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।
সাইটটির মোট পুরুষ ইউজারের সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ ৭৭ হাজার ৮২০ জন। এদের ৯ লাখ ৫২ হাজার ১৭৬ জনের বয়সই ৯ দিয়ে শেষ হয়েছে। অন্য যেকোনো বয়সের তুলনায় ৯ দিয়ে শেষ হওয়া বয়সের ইউজার সংখ্যা ১৮% বেশি।
ছয়টি গবেষণায়ই অল্টার এবং হার্শফিল্ড দেখতে পেয়েছেন, ৯ দিয়ে শেষ হওয়া বছরের বয়সী লোকরা তাদের বয়স বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উন্মনা হয়ে থাকেন। আর তাদের জীবনটা কতটা অর্থপূর্ণ তা নিয়েও ভাবিত থাকেন।
ফলে তাদের মধ্যে এমন আচরণের উদ্ভব ঘটতে পারে যা জীবনের অর্থ অনুসন্ধান বা জীবনে অর্থহীনতার সংকট হিসেবে আখ্যায়িত হয়। যা তাদেরকে অবৈধ যৌন সম্পর্কে জড়াতেও প্ররোচিত করতে পারে।
তবে সাধারণত যৌন অবিশ্বস্ততার বিষয়টি গবেষণায় নিরুপন করা বেশ কঠিন। কারণ যৌনতায় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এমন লোকদেরকে স্বেচ্ছায় গবেষণায় যুক্ত করাটা প্রায় অসম্ভব।
এ ছাড়া অনলাইন ডেটিং সাইটগুলোতে লোকে তাদের বয়সের ব্যাপারেও অসততা প্রদর্শন করেন। অল্টার এবং হার্শফিল্ড অবশ্য এ বিষয়েও গবেষণা চালিয়েছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, যারা অনলাইনে নিজেদের বয়স কমিয়ে বলতে চান তারা সাধারণত ৫ দিয়ে শেষ হওয়া বছর উল্লেখ করেন। যেমন ৩০ বছর বয়সীরা সাধারণত তাদের বয়স ২৫ বলে উল্লেখ করলেও কখনোই ২৯ বলেন না।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যারা তাদের জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল তাদের মধ্যেই যৌন বিশ্বাসঘাতকতার প্রবণতা বেশি থাকে।
২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী দম্পতিগুলোর যে সদস্য কম অর্থ উপার্জন করেন তার মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোকের মধ্যে যৌন বিশ্বাসঘাতকতার প্রবণতাও বাড়তে থাকে। এর কারণ সম্ভবত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগও বাড়তে থাকে।
আর যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রীদের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল তাদের মধ্যে যৌন বিশ্বাসঘাতকতার প্রবণতা বেশি থাকে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, জীবন-জীবিকার জন্য স্ত্রীদের ওপর নির্ভরশীল পুরুষদের ১৫ শতাংশই যৌন বিশ্বাসঘাতকতা করেন। অন্যদিকে, যে পুরুষদের স্ত্রী তাদের সমপরিমাণ উপার্জন করেন তাদের মাত্র ৫ শতাংশ বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
গবেষকদের মতে, ৯ দিয়ে শেষ হওয়া বছরের মানুষদের মধ্যে যৌন বিশ্বাসঘাতকতরা প্রবণতা বেশি থাকে এই ধারণা বা তত্ত্ব বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তবে মানুষের আচরণের মতো জটিল বিষয়ে একেবারে সঠিক পূর্বানুমান করা সম্ভব নয়। এ ধরনের কোনো বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।