ভাইফোঁটা (গল্প)
[kodex_post_like_buttons]
অমৃতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়:
বিজলীর একমাত্র ভাই তপেশ ,বছর দশেক পর দেশে ফিরল ভূত-চতুর্দশীতে।বড় চমকেছিল বিজলী।
সত্যি যেন ভূত দেখা!
তপেশ ঘরে ঢুকে বিজলীকে নমস্কার করে যখন ডাকলো-“দিদি”।ভাই বোন দু-জনের চোখদিয়েই জল গড়াচ্ছে! হারাধন ফিরে পাবার আনন্দাশ্রু।বিজলী অনেকদিন পর গালভরে না ডেকে পারেনি-“ভাই”।
বিজলীই জোর করেছে, এলোই যখন,সুযোগও আছে, দুটো দিন আরো থেকে ভাইফোঁটাটা নিয়েই ফিরুকনা ভাই।আবার কবে আসবে,আদৌ আসবে কিনা, আর এলেও বিজলীর সাথে দেখা হবে কিনা কে বলতে পারে। তপেশ না করেনি।দুটো দিন রুকে যাওয়া মেনে নিয়েছিল। ভাইফোঁটার দিন আসবেই আসবে বলে একটা দিনের জন্য আসানসোলে শালীর বাড়িটা ঘুরে আসতে গেল।বিয়ের পর কোনোদিন আত্মীয় বাড়ি যায়নি। দেখেওনিা শালীকে।আর বউরও দুটো দিন দিদির সাথে থাকা হবে।
ভাইফোঁটা হবে এই হঠাত পাওয়া খুশিতে ঝকমক করছে বিজলীর মুখ।কথা নিয়েছে ভাইর থেকে।
ফোঁটার দিন সকাল থেকে ব্যস্ত চঞ্চল বিজলী থালায় ধান দূর্বা চন্দন কাজল ঘি সব জোগাড যন্ত্র করে লোহার কাঠি হিসেবে ওর কাজের বড় কাঁচিটা থালায় রেখে, প্রদীপে তেল পলতে দিয়ে, নোড়াটা আনতে রান্নাঘরে ঢুকেছে ,শুনতে পেল শাশুড়ির গলা-“বউমা,একবার আসবে? তোমার শ্বশুর দেখ কেমন যেন করছে। বিপিনকে তো ডেকে পাচ্ছি নে।বড় বউমা ফোঁটা দিতে বাপের বাড়ি গেছে। একবার দেখবে?”
বিজলীর শ্বশুর-শাশুড়ী বড় ছেলে বিপিনের সাথেই থাকেন। ছোট ছেলের বউকে পছন্দ হয়নি বলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন হয়েছেন।পাশাপাশি থেকেও শুধুমাত্র ওই বিজলীর জন্য ছেলে, ছেলে বউর সাথে বাক্যালাপ বন্ধ। তারাই আলাদা করেদিয়েছেন ছোটছেলে, ছেলে-বউকে।বহুকাল ধরে কথা বন্ধ!
সেই মা-ই ডাকছেন। বিজলীর বুকটা অভিমান ছাপিয়ে আনন্দে উপচে ওঠে। দুদিনে দু-দুটো হঠাত্ আসা খবরে বিজলীর নিজেকে দায়িত্বশীল প্রমাণের উচ্ছ্বাস লুকনো থাকেনা। সে দৌড়ে শ্বশুরের ঘরে ঢুকে স্থির হয়ে যায়, বুড়োমানুষটার মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরুচ্ছে। চোখ কপালে। বুক নড়ছে না। বিজলীর গলাদিয়ে আর্ত চিত্কার বেরিয়ে আসে-“বাবা! “
শোকাবহে ভাইফোঁটার আয়োজন অবহেলায় পড়ে থাকে ।
দূরে কোথায় যেন কেউ ভাইফোঁটা দিল, শঙ্খ হুলূধ্বনি ভেসে আসছে। বিজলী কেঁপে ওঠে।জীবনে ছোট ছোট সম্ভাবনাগুলো কেন যে জন্মায় কেনইবা মরে? যম দুয়ারে কাঁটা দিতে চাইলেও তারাতো বাঁচে না!সম্পর্কগুলো অনবরত বদলে বদলে যায়।
শবযাত্রীদের রওনা দেবার মুখে বিজলীর হারিয়ে যাওয়া ভাই তপেশ আসানসোল থেকে ফোন করেছে-“এবারটা আর আসা হলনা রে দিদি। সামনের বার দেখা যাবে। কিছু মনে করিস না। “
বিজলী কিছু বলতে পারে নি, কেবল কেঁদেছে।