November 1, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

জনসংখ্যাতেই রাজনীতি পতন, আসন বাঁচাতে ‘১৬ বাচ্চা জন্ম’ নিদান 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা  টাইমস :
ভারতের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৪০ কোটির ওপরে। চিনেকেও ছাপিয়ে যাওয়ার পথে।  জনসংখ্যার এই বিপুর সমুদ্রে দাঁড়িয়ে দুই মুখ্যমন্ত্রী জনগণকে ১৬ টি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। শুনেই ক্ষেপে গিয়েছেন দেশের জ্ঞানী-গুণীরা। আরে বাবা রাগ হবেই বা না কেন ? সম্প্রতি এক সমীক্ষা বলছে বিশ্বের সব থেকে বেশি দারিদ্র  মানুষের বাস ভারতে। সেই মানুষগুলির অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, কিছুর সংস্থানই নেই।  স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা তাঁদের কাছে অলীক কল্পনা।  সেই দেশে তাহলে প্রথম কাজ হল বিপুল জনসংখ্যার চাপ কমানো। ওই কথায় আছে না ‘ছোটা পরিবার সুখী পরিবার ‘ আর সেখানে দাঁড়িয়ে এনডিএ শিবিরে থাকা এন চন্দ্রবাবু নাইডু, অন্যজন হলেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক এম কে স্ট্যালিন কিনা ১৬টি করে সন্তান ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। শুনলে রাগ হওয়াটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই মুখ্যমন্ত্রীর নিজের রাজ্যের দিকে তাকিয়ে যদি দেখা হয় তাহলে কিন্তু একবাক্যে স্বীকার করতে হবে এঁরা দু’জনই একদম সঠিক উপদেশ দিয়েছেন।  
এই দুই রাজ্যের জনসংখ্যার নিরিখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ক্রমাগত পরিবারপ্রতি জন্মহার কমছে।  আর তাতেই এই রাজ্যের নেতাদের এই মন্তব্য।  বলা হচ্ছে এই রাজ্যগুলিতে শুধু জন্মহারই কমছে না তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বয়স্ক-প্রবীণদের সংখ্যা। এমনকি রাজ্যের যুবকরা ক্রমাগত অলসে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার হারে সরাসরি প্রভাব পড়াতেই নাইডু বা স্ট্যালিনের এই উদ্বেগ।
উল্লেখ্য, ১৯ অক্টোবর  অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু আচমকাই বলেছেন, আরও বেশি করে সন্তান উৎপাদন করুন। নিজেই নিজের আগের মন্তব্য করে স্মরণ করে বলেন, আগে আমি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলাম ঠিকই। এখন আমি জনসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী এও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যাঁদের দুয়ের বেশি বাচ্চা থাকবে তাঁদেরই রাজ্যের পুরসভা-পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার জন্য আইন আসতে পারে।
অন্যদিকে তামিলনাড়ু মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন নবদম্পতিদের ১৬টি বাচ্চার বাবা-মা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কী করে এতগুলি বাচ্চা মানুষ হবে, তাঁদের জন্য রাজ্য কোনও আর্থিক সাহায্য দেবে কিনা, তা অবশ্য তিনি বলেননি। 
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য শমিকা রবি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ১২ কোটি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি আছেন, যাঁদের কর্মক্ষমতা এবং জন্ম-সক্ষমতা হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, সক্ষম যুবক-যুবতীর সংখ্যা কমছে। আর যারা মধ্য বয়স্ক আছে, তাঁরাও প্রবীণের দিকে এগচ্ছেন। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে চলেছে।
বিশেজ্ঞরা বলছেন ভবিষ্যতে এই রাজ্যগুলির ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশর বয়স ৬০ বছরের বেশি হবে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির ফার্টিলিটির হার উত্তরের রাজ্যগুলির তুলনায় কম। অন্ধ্র প্রদেশের গড় ফার্টিলিটির হার ১.৫ এবং তামিলনাড়ুর ১.৮। দুটিই জাতীয় গড় ২-এর থেকে কম।
রাজনীতির দিক থেকে দেখলেও দক্ষিণের রাজ্যগুলি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার দিকে, কারণ দক্ষিণ ভারতে জনসংখ্যা কমতে থাকায় সংসদীয় আসন হারাতে হতে পারে। যার সবথেকে খারাপ প্রভাব পড়বে কেরলে। বর্তমানের ২০টি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, তামিলনাড়ুতে মাত্র একটি আসন বাড়ার সম্ভাবনা। উত্তরপ্রদেশে বাড়তে পারে ১১ থেকে ১৩টি আসন। বিহারও এগিয়ে যাওয়ার দিকে। এই সব রাজ্যগুলিতে নির্বীজকরণের জন্য নগদ পুরস্কার এবং বিনামূল্যে ট্যাবলেট বিলি করেও কাজ হয়নি।
২০২১-এর একটি হিসাব বলছে, বিহারের  সু-জন্মহার নিয়ন্ত্রণ হার ৩.০২, উত্তরপ্রদেশে ২.৩৮ এবং তৃতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড ২.৩১ এ রয়েছে।
এদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে এই হার বর্তমানে ১.৫। তার থেকেও খারাপ অবস্থা তামিলনাড়ুর। সেখানে হার ১.৪। পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও। কলকাতায় আরও কম, মাত্র ১। যা দেশের প্রধান বড় শহরগুলির মধ্যে সবথেকে কম। 

Related Posts

Leave a Reply