জানেন কি নিজেকে শেষ করে আমাদের রক্ষা করে খাবারের এই ব্যাকটেরিয়া
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
আজ এই প্রবন্ধে এমন এক গ্ল্যাডিয়েটর গল্প শোনাবো আপনাদের, যে না থাকলে হয়তো আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতেই পারতাম না। শরীরের কোন অঙ্গের কথা বলছেন, একটু খোলসা করবেন! না কোনও অঙ্গের কথা বলছি না। বলছি এমন এক ব্যাকটেরিয়াদের কথা যে নিজেকে শেষ করে আমাদের রক্ষা করে চলেছে। এই কথাটা শোনার পর হয়তো ভাবছেন, ব্যাকটেরিয়ার কাজ তো হল শরীরের ক্ষতি করা, তাহলে উপকারে লাগছে কিভাবে, তাই তো! আসলে কী জানেন আমাদের শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ভাল ব্যাকটেরিয়ারও সন্ধান পাওয়া যায়, যারা ক্ষতি তো করেই না, উল্টে গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো যুদ্ধ করে নানা রোগকে আমাদের শরীর থেকে দূরে রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিটি মানুষের শরীরে একই ধরনের উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে না। প্রায় ১০০০-এরও বেশি প্রজাতি রয়েছে এইঈসব ব্যাকটেরিয়াদের, যারা নিজের মধ্যে দল বেঁধে কখনও পেটে তো, কখনও শরীরের অন্য জায়গায় ছাওনি স্থাপনে করে সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে। প্রসঙ্গত, এক ট্রিলিয়ানেরও বেশি এইসব উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্দরে এমন পরিবর্তন আনে যে আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের মতো মারণ রোগ শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
শুধু তাই নয়, রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মধ্যে দিয়ে সংক্রমকে দূরে রাখতেও এই ব্যাকটেরিয়ারা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। চিকিৎসকরেরা একাধিক কেস স্টাডি করে দেখেছেন, যে যে খাবার খাওয়ার কারণে শরীরের অন্দরে উপকারি ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, সেগুলি সম্পর্কে অনেকেই খোঁজ রাখেন না। ফলে ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা কমতে থাকে। আর এমনটা হওয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধী দেওয়াল এতটাই দুর্বল হয়ে পরে যে রোগকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা চলে যায়। ফলে শরীর ভাঙতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমতে থাকে আয়ুও। মূলত যে যে খাবারগুলি নিয়মিত খেলে শরীরে উপকারি ব্যাকটেরিয়াদের যোগান ঠিক থাকে, সেগুলি হল…
১. দই: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত টক দই খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা একাধিক পেটের রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। প্রসঙ্গত, দুধ থেকে যখন দই হয়, তখনই তাতে ভাল ব্যাকটেরিয়ারা জন্মাতে শুরু করে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নিজের খেল দেখায়। ফলে রোগমুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।
২. কলা: শরীরে পটাশিয়াম সহ একাধিক উপকারি উপাদানের ঘাটিতে মেটাতে যেমন এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি উপকারি ব্যাকটেরিয়াদের যোগান যাতে ঠিক থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। শুধু কী তাই, সেই সঙ্গে শরীরে অন্দরে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমাতেও এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেট খারাপের সময় কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। আসলে এমনটা করলে স্টমাকে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্বাবাভিকভাবেই রোগ সারতে সময় লাগে না।
৩. ক্রসিফেরাস সবজি: সবজিদের একাধিক পরিবারের মধ্যে ক্রসিফেরাস হল একটি বিশেষ পরিবার, যার সদস্যরা হল ব্রকলি, ফুলকোপি এবং বাঁধারোপি। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এই ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে গ্লকোসিনোলেট নামে একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা উপকারি ব্যাকটেরিয়ারদের শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্লাডার, ব্রেস্ট, কোলন, লিভার, লাং এবং স্টমাক ক্যান্সারকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৪. জাম: বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের শক্তি বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং ভিটামিন কে এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জামের শরীরে উপস্থিত উপকারি উপাদানগুলি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। ৫. ডাল: এতে রয়েছে উপকারি ফ্য়াটি অ্যাসিড, যা ইন্টেস্টাইন সেলের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজন কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিটি ডালেই উপস্থিত প্রোটিন, ফাইবার, ফলেট এবং ভিটামিন বি নানা ধরনের রোগকে দূরে রাখার মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এবার নিশ্চয় উত্তর পেয়ে গেছেন যে প্রতিদিন কলা এবং দই খেলে শরীরের অন্দরে কী কী ঘটনা ঘটতে পারে?