এই ৮ টি খাবারে ক্যান্সারকে নিমন্ত্রন দিচ্ছেন
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
খাবারের সঙ্গে শরীরের যে একটা সরাসরি যোগ রয়েছে, সেকথা নিশ্চয় কারও অজানা নেই। আর এ বিষয়টি তো ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে, রোগেভোগের পিছনে আমরা কী ঘরনের খাবার খাচ্ছি তা অনেকাংশেই নির্ভর করে। এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি খেলে শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই তো চিকিৎসকেরা এইসব খাবারগুলি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত, গত কয়ক দশকে সারা বিশ্বে নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৪ মিলিয়ানেরও বেশি মানুষ। আর এই সংখ্যাটা ক্রমাগত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে এখনই যদি ক্যান্সার রোগের প্রসারকে আটকে ফেলা না যায়, তাহলে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি পরিবারে একজন করে ক্যান্সার রোগী থাকবে। এমন অবস্থায় প্রয়োজনীয় সাবধানতাগুলি না নিলে যে খুব বিপদ, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না! ক্যান্সার রোগ হওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি দায়ি থাকে সেগুলি হল জিনগত সমস্যা, অনিয়ন্ত্রত জীবনযাপন, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণ, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান প্রভৃতি। তাই তো চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, ডায়েটের পাশপাশি জীবনযাত্রায় যদি পরিবর্তন আনা যায়, তাহলে ক্যান্সার রোগের প্রকোপকে অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। আর এক্ষেত্রে বোল্ডস্কাই বাংলা আপনাদের সাহায্য করতে পারে। কারণ এই প্রবন্ধে এমন ৮ টি খাবারের বিষয়ে আলোচনা করা হল, যেগুলি প্রতিদিনের ডায়েট থেকে বাদ দিলে ক্য়ান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক হ্রাস পায়। কী কী খাবারকে এক্ষেত্রে মুখে তুলতে মানা করছেন চিকিৎসকেরা? চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস: আমেরিকার ‘ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই’য়ের তত্ত্বাবধানে হওয়া এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। আসলে এমন ধরনের খাবারে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যেগুলি ‘কারসিনোজেন’। অর্থাৎ এক প্রকার বিষ, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, “স্মোকড মিট” বা কাঠের ধোঁয়ার প্রস্তুত মাংসও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। কারণ এই ধরনের খাবার তৈরির সময় মাংসে ‘টার’ অর্থাৎ ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি বিষাক্ত পদার্থ শোষিত হয়ে যায়, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়।
২. চাষ করা মাছ: বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছেদের অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিকভাবে বড় করা হয়। সেই সঙ্গে চাষের সময় মাছেদের নানাবিধ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবিদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নানা ধরনের জীবণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাষক ও অন্যান্য ‘কারসিনোজেনিক’ রাসায়নিক উপাদান ব্য়বহার করা হয়। ফলে এই ধরনের মাছ খেলে শরীরে ওইসব কার্সিনোজেনিক উপাদানের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক মাছের তুলনায় চাষ করা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কম থাকে। তাই যতটা সম্ভব নদী বা সমুদ্রের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এমন চাষ করা মাছ খাওয়া শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়।
৩. নুন বেশি রয়েছে এমন খাবার এবং স্মোক ফুড: এই ধরনের খাবারে প্রচুর মাত্রায় প্রিজারভেটিভ, যেমন, ‘নাইট্রেইট’ থাকে। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে শরীরে প্রিজারভেটিভের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একসময় গিয়ে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ক্রমেই ক্যান্সার রোগের প্রথকে প্রশস্থ করে। অন্যদিকে, ধোঁয়ায় প্রস্তুতকৃত খাবার বা স্মেুক ফুড উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয় বলে এতেও ‘নাইট্রেইট’র পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। তাই তো এমন ধরনের খাবারও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে বলেন চিকিৎসকেরা।
৪. ক্যানড ফুড: টিনজাত খাবারকে দীর্ধদিন তাজা রাখতে এমন কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। শুধু তাই নয় এমন খাবারের স্বাদ যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য়ও অনেক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এত মাত্রায় রাসায়নিক দেওয়া খাবার খেলে স্বাভাবিকবাবেই শরীরের ক্ষয় হতে শুরু করে দেয়।
৫. আলুর চিপস: “হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েল”এ ভাজা এই সব চিপসে প্রচুর মাত্রায় লবণ থাকে, যা ওজন বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে। সেই সঙ্গে আরও সব মারণ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, ‘নিউ ইংল্যান্ডের জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স-ফ্যাটও থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। আর লবণে থাকা সোডিয়াম বাড়ায় রক্তচাপ। আলুর চিপসকে মুচমুচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। ফলে এতে ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামক ‘কারসিনোজেন’ তৈরি হয়। যা সাধারণত সিগারেটেও মেলে। তাহলে বুঝতে পারছেন তো ধূমপানে শরীরের যা ক্ষতি করে, সস্তার আলু চিপস খেলেও শরীরের একই রকম ক্ষতি হয়ে থাকে।
৬. মাইক্রোওয়েভ তৈরি পপকর্ন: প্য়াকেট থেকে শুরু করে খাবারটি বানানোর পদ্ধিত, সব কিছুই এত অবৈজ্ঞানিক যে এমন খাবার খেলে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে যে উপাদানগুলি ব্য়বহার করে এমন ধরনের পপকর্ন বানানো হয়, সেগুলি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নানাভাবে শরীরের ক্ষয় করতে শুরু করে। তাই তো চিকিৎসক মহল মাইক্রোওয়েভ পর্পকর্নের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। আপনিও পিছিয়ে থাকবেন কেন। সুস্থ থাকতে আজ থেকেই বন্ধ করুন এমন খাবার অভ্য়াস।
৭. পরিশোধিত সাদা আটা: আটাকে যখন পরিশোধিত করা হয় তখন প্রায় তার সব পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয়, যাতে ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় লাগে। এই ধরনের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। অর্থাৎ শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দিতে পারে এমন খাবার। সেই সঙ্গে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই তো পরিশোধিত সাদা আটার পরিবর্তে গম, কাঠবাদাম বা বার্লির আটা খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৮. সোডা বা কোল্ড ড্রিঙ্ক: গত দশক ধরে একাদিক গবষণা হয়েছে এর উপর। সবকটিতেই দেখা গেছে এমন পানীয়তে হাই ফ্রকটোস কর্ন সিরাপ, নানাবিধ কেমিক্যাল এবং ডাই থাকে, যা শরীররে অন্দরে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। তাই একথা বলা যেতে পারেই যে, এমন ঠান্ডা পানীয় খাওয়া প্রায় বিষ খাওয়ারই সমান।