‘ক্যাশলেস’ তাই কেউ নিলো না এসআই;এর মুমুর্ষু বাবাকে

কলকাতা টাইমস :
গায়ে ধুম জ্বর, ঘন ঘন বমি হচ্ছে। মূত্রনালির সংক্রমণে মরণাপন্ন কলকাতা রাজ্য পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর তাপস ঘোষের বাবা। গভীর রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগিকে নিয়ে রাতভর কলকাতার বেশ কয়েকটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে বেড়ালেন তাপস। কিন্তু কোনো হাসপাতালই রোগি ভর্তি করতে রাজী হলো না! অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়াই মুমুর্ষু ওই রোগীকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে হাসপাতালগুলি।
তাপস জানিয়েছেন, সব জায়গাতেই প্রথমে বলা হয়, বেড আছে। কিন্তু রোগীর সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় ক্যাশলেস চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে শুনেই বলে দেওয়া হয়, বেড নেই। মোট ৪টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওই সাব ইন্সপেক্টরের বাবাকে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতভর দৌড়ঝাঁপের পর মঙ্গলবার সকালে এনআরএস হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করিয়েছেন সাব ইন্সপেক্টর তাপস ঘোষ।
ওপার বাংলার বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে চিকিৎসাকে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এটা ঠেকাতে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের হেলথ স্কিমে ক্যাশলেস চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা এই হাসপাতালগুলির। কিন্তু তার পরেও রোগীকে প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ উঠেছে নামী দামি তিন হাসপাতাল ডিসান, মেডিকা ও ফর্টিস হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
সাব ইন্সপেক্টর তাপস ঘোষ উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানায় কর্মরত। বাড়ি নবদ্বীপে। তার বাবা মধু ঘোষ মূত্রনালির সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। সোমবার ওই হাসপাতাল থেকে তাকে কলকাতায় রেফার করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মধু ঘোষকে নিয়ে কলকাতায় রওনা দেন পরিবারের লোকজন। রাত একটার দিকে কলকাতায় পৌঁছে তারা প্রথমে যান বাইপাসের ধারে ফর্টিস হাসপাতালে।
তাপস ঘোষের অভিযোগ, ‘প্রথমে কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু ক্যাশলেসের কথা বলতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, বেড নেই।’
ওই রাতেই তড়িঘড়ি তারা ছোটেন রাসবিহারীতে। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। ক্যাশলেসের কথা জানার পর বেড নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাপস ঘোষ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কলকাতার আনন্দপুর থানায় কর্মরত এক পুলিশ অফিসারকে ফোন করি। কয়েকটি হাসপাতালে কথা বলার পর তিনি ডিসান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মতো আবার রাসবিহারী থেকে ছুটে যাই ডিসানে।’
‘ডিসানের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। সেখানে প্রথমে এমার্জেন্সিতে ভর্তি নেয় কর্তৃপক্ষ। রাত তখন প্রায় সাড়ে ৩টা। কিন্তু, ক্যাশলেসের কথা শুনেই বেঁকে বসে এই হাসপাতালও। প্রথমে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে রাজ্য সরকারের হেলথ স্কিমে ক্যাশলেসে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাই নগদে চিকিৎসা করতে হবে।’
‘বাবার কথা ভেবে এই শর্তেই রাজি হয়ে যাই। তখন তারা একটি ফর্ম দেন। যেটি আসলে একটি বন্ড। যাতে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়, ক্যাশলেস চিকিৎসার আওতায় হলেও আমি নগদে চিকিৎসা করাব। তাতেই সাক্ষর করে দেই। কিন্তু তারপরও কিছুক্ষণ টালবাহানার করে হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়ে দেন, নগদেও চিকিৎসা করতে পারবেন না তারা। স্পষ্ট কারণও বলেনি। ইমার্জেন্সিতে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল ২ ঘণ্টা। সামান্য জ্বরের ওষুধ ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়নি।’
এরপর তাপস ঘোষ তার বাবাকে ডিসানে রেখেই যান মেডিকা হাসপাতালে। সেখানেও কম বেশি একই অভিজ্ঞতা। প্রথমে সব কিছু জানার পর চিকিৎসায় রাজি হলেও ক্যাশলেস শোনার পরই প্রত্যাখ্যান করা হয়। সেখান থেকে ফর্টিস হাসপাতালেও যান সেই এসআই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উত্তর ছিল একই। এভাবে রাতভর দৌঁড়াদৌঁড়ি করে সকাল হয়ে যায়। তারপর বাধ্য হয়ে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাবাকে ভর্তি করেন তাপস। সেখানে আপাতত চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
তাপসবাবু ‘এই হেলথ স্কিমের জন্য প্রতি মাসে আমাদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হয়। অথচ এই বেসরকারি হাসপাতালগুলি এ ভাবে মুমুর্ষু মানুষকে হয়রান করছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে।’