অস্ত্রোপচারের পর এঁরা প্রত্যেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। মহিমার মা বলেন, রাক্ষুসি কথাটা শুনতে শুনতে মেয়ে কাঁদত।অস্ত্রোপচারের পর আমরা খুশি। আর মুকুলের মায়ের কথায়, কলকাতায় অপারেশন করিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে ছেলে। ও এখন পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছে। মহিমা, মুকুলদের অস্ত্রোপচার করেছেন এস এস কে এম হাসপাতালের দন্ত চিকিত্সক তথা ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন অনির্বাণ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, কানপুর আইআইটির গবেষক ছাত্রীর বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। মহিমা, মুকুলদের চোয়াল, দাঁতের গঠনের রিকনস্ট্রাকশন করেছি। তবে ঠিকঠাক অস্ত্রোপচার না হলে সাঙ্ঘাতিক বিপদ!
সুন্দর হওয়ার এই প্রবণতা সম্পর্কে অধ্যাপিকা তথা সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, সামনে দেখনদারি, পিছনে গুণবিচারি… যতদিন সমাজে এটা থাকবে, ততদিন এই সমস্যা চলবে। সামাজিক চাপে এঁরা খরচেও পিছপা হচ্ছেন না। সামাজিক এই চাপের জেরে একবার আত্মহননের চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা সুমনা নস্কর। মাথায় চুল, ভুরু প্রায় না থাকায় চায়না বলে ডাকত পাড়ার লোক। পাত্রপক্ষের কথায় অপমানিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। আবার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা বছর কুড়ির আসমা বিবির স্তন প্রায় ছিলই না। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে তাঁদের যথাক্রমে মাথায় ও ভুরুতে চুল প্রতিস্থাপন এবং স্তন রিকনস্ট্রাকশন করা হয়। সম্প্রতি দুই জনেরই বিয়ে হয়েছে।
একইভাবে গোঁফ না থাকায় বিয়ে আটকে যাচ্ছিল নদিয়ার রানাঘাটের এক যুবকের। গোঁফ প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর। ন্যাশনালের প্লাস্টিক সার্জন বিক্রমসিংহ রাঠৌরের অভিজ্ঞতা, অনেকেই এসে কান্নাকাটি করেন। তাঁদের কাউন্সেলিং করি আমরা। বিয়ে হওয়ার পর এখন অনেকে মিষ্টি নিয়ে বিভাগে আসছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান তথা প্লাস্টিক সার্জন সন্দীপন গুপ্তও বলেন, সামাজিক সমস্যা এড়াতে সৌন্দর্যের খোঁজে আসেন অনেকেই। তবে তাঁদের ৮০ শতাংশের আশা পূরণ করতে পারি আমরা।
উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা প্রণতি মণ্ডলের কানের পাতা প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি। মেয়েটির বাঁ কানের পাতা ছিল না বলে অনেকেই ডাকত কান কাটা! সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের ব্যাখ্যা, যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন চলছে, তাতে অনেকেই সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য প্রভাবিত হন। যতটা সম্ভব সৌন্দর্য বাড়ানো মানুষের স্বভাবগত। তবে সৌন্দর্যের বাণিজ্যিক মূল্যও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মূল্য পায় স্বাভাবিক সৌন্দর্য। কারও ঘাটতি থাকলে তিনি খরচ করে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করেন। এ প্রবণতা স্বাভাবিক।