অজ্ঞান হবেন না শুনে, এবার নাকি বদলে ফেলা যাবে আস্ত মাথাটাই!
কলকাতা টাইমস :
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন এখন খুব একটা অসম্ভব ধারণা নয়। লিভার থেকে হার্ট- প্রতিস্থাপন হাতের মুঠোয়। কিন্তু, তা বলে ‘হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ বা ‘মাথা প্রতিস্থাপন’! এটাও সম্ভব!
ইটালির তুরিনের নিউরো সার্জেন সার্জিও ক্যানাভেরো দাবি করেছেন, বিশ্বে তিনি প্রথম মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন করতে চলেছেন। তাঁর এই উদ্যোগ বিশ্ব মানচিত্রে চিকিৎসা ও প্রযুক্তির ইতিহাসকে এক অন্য অধ্যায়ে নিয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন সার্জিও।
সার্জিওর দাবিকে প্রতিষ্ঠা দিতে এগিয়ে এসেছেন ৩১ বছরের রুশ সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ভ্যালেরি স্পিরিডোনোভ। বিরল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ভ্যালেরি। ‘ওয়্যার্ডনিগ-হফম্যান’ নামে এই জটিল স্নায়ুরোগে মানুষের মাথা ও কাঁধের মাংসপেশি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আস্তে আস্তে শিথিল হতে থাকে স্নায়ুগুলি। শিরদাঁড়ার নমনীয়তাও কমে গিয়ে তা শক্ত হয়ে যায়। ভ্যালেরির আশা সার্জিওর পরীক্ষা সফল হলে সে এক নতুন জীবন ফিরে পাবে।
‘মাথা প্রতিস্থাপন’-কে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন সার্জিও। একটির ভাগের নাম তিনি দিয়েছেন ‘হেভেন’, এখানে মাথা প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক পর্যায়গুলি সম্পন্ন হবে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘জেমিনি’, এখানে শিরদাঁড়াকে মাথার সঙ্গে জোড়ার কাজগুলি করা হবে।
সার্জিও এই ঘোষণায় অবশ্য বিশ্বজুড়ে ঝড় ওঠেছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে বর্তমান দিনের তাবড় তাবড় ব্যক্তি সার্জিওকে ‘পাগল’ বলেও প্রতিপন্ন করেছেন। কেউ কেউ তাঁর এই ঘোষণাকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলেও ব্যাখ্যা করছেন, এমনকী, সাধারণ মানুষ যাতে সার্জিও পরীক্ষার ‘গিনিপিগ’ না হন তার জন্যও আবেদন করা হয়েছে। সার্জিওকে বর্তমান সময়ের ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
কিন্তু, নিজের দাবিতে অনড় সার্জিও। ৫১ বছরের এই ইটালিয়ান শল্য চিকিৎসকের দাবি, ৩৬ ঘণ্টায় তিনি এক মানুষের মাথা অন্য মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করবেন। এর জন্য খরচ হবে ২০ মিলিয়ন ডলার। ঐতিহাসিক এই প্রতিস্থাপনে যুক্ত থাকবেন ১৫০ জন। যার মধ্যে আছেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নার্স, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিদ, মনোবিদ থেকে ভারচুয়াল রিয়ালিটি ইঞ্জিনিয়াররা।
এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে, সার্জিওর ক্লায়েন্ট ভ্যালেরি এবং ব্রেন-ডেডে চলে যাওয়া একজনের শরীরকে পাশাপাশি রাখা হবে। এর পর দুজনের শরীর এবং মাথাকে মেডিক্যাল ক্লিপে আটকে দেওয়া হবে। এবং দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য লাগানো হবে ‘ব্রিদিং টিউব’। অপারেশন থিয়েটারের তাপমাত্রা নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে দুটি শরীরই একদম বরফ হয়ে যায়। এর পরই শুরু হবে আসল কাজ।
১৯৭০ সালে মার্কিন নিউরো সার্জেন রবার্ট হোয়াইট সফলভাবে এক বাঁদরের মাথাকে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, বাঁদরটি কয়েক দিন পর মারা যায়। এখনও পর্যন্ত মাথা প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাই একমাত্র নজির।