প্রতারণাই এই তারকাকে ৪৭ পেরিয়েও সিঙ্গেল
নিজেকে হ্যাপিলি সিঙ্গেল বলে থাকেন। কিন্তু এখনও কেন সিঙ্গেল বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী? তাব্বুর সিঙ্গল থাকার পিছনে অনেকগুলো কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে। অনেক ঘা’ত প্রতি’ঘা’তের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তার জীবন। ভালোবেসে বারবার প্র’তা’রিত হয়েছেন তিনি।
১৯৭০ সালে এক হায়দরাবাদি মুসলিম পরিবারে জন্ম তাব্বুর। বাবা জামাল হাসমি এবং মা রিজওয়ানা। তার জন্মের পরপরই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এটাই ছিল তার জীবনের প্রথম বড় আ’ঘা’ত। খুব ছোট হওয়ায় বাবা-মার বিচ্ছেদটা হয়তো সে সময় অনুভব করতে পারেননি তিনি।
তবে বড় হওয়ায় সঙ্গে ক্রমশ সেই ব্যথা অনুভব করেছেন। তাব্বু মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। মা, নানা, নানিমা সবাই খুব শিক্ষিত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি মুম্বাই চলে আসেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনার জন্য। দুই বছর সেখানে পড়াশোনা করেন তিনি।
কিন্তু বরাবরই তাব্বুর অভিনয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। অভিনেত্রী শাবানা আজমির আত্মীয় হওয়ায় সেই আগ্রহ আরও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। অভিনেত্রী তানভী আজমি, বাবা আজমি এবং অভিনেত্রী ফারহা নাজের সঙ্গেও তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। সে কারণে বরাবরই অভিনয় জগতের সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়ে গিয়েছিল।
মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকেই অভিনয় শুরু করেন তাব্বু। ১৯৮০ সালে ‘বাজার’ ছবিতে তাকে খুব ছোট ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। তারপর ১৯৮৫ সালে ‘হম নওজওয়ান’ ছবিতে দেবানন্দের মেয়ের ভূমিকায় তাকে দেখা গিয়েছিল।
তাব্বু তেলুগু, তামিল, বাংলা, হিন্দি— বিভিন্ন ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি বহুভাষী। তেলুগু, উর্দু, হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, তামিল, মালয়ালম, ইংরাজি, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন তিনি। তার অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে যান বনি কাপূর।
১৯৮৭ সালে ‘প্রেম’ ছবিতে সঞ্জয় কাপূরের বিপরীতে তাব্বুকে নেন তিনি। সেই শুরু। তারপর থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি তব্বুকে। লাফিয়ে উঠেছে তার কেরিয়ার গ্রাফ। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে অনেক আ’ঘা’ত সহ্য করতে হয়েছিল তাকে।
তাব্বু অবশ্য বরাবারই ভীষণ খোলামেলা। নিজের ঘা’ত-প্রতি’ঘা’তগুলো কখনও লুকিয়ে রাখেননি তিনি। বরং তার লাভ লাইফ সম্বন্ধে ভীষণ সোজাসাপ্টা জবাব দিয়েছেন তিনি। তার জীবনে প্রথম পুরুষ ছিলেন সঞ্জয় কাপূর। ‘প্রেম’ ছবিতে অভিনয় করা থেকেই তাদের প্রেমের সূত্রপাত।
তাব্বু সম্পর্কটাকে নিযে ভীষণ সিরিয়াস ছিলেন। কিন্তু অনেক দিন ডেট করার পর কোনও অজ্ঞাত কারণে তাব্বুর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে ফেলেন সঞ্জয়। ‘প্রেম’ ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে। আর তার দুই বছর পরই গার্লফ্রেন্ড মাহিপ সাঁধুকে বিয়ে করে নেন সঞ্জয়।
অনেকেই মনে করেন, মাহিপের জন্যই তব্বুর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে ফেলেছিলেন সঞ্জয়। আজও তাব্বু আর সঞ্জয়ের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ। সঞ্জয় কাপূরের সঙ্গে বিচ্ছেদের শোক ভুলতে তাব্বুর বেশ কিছু দিন লেগেছিল। কিন্তু মানসিক ভাবে দৃঢ় তাব্বু এই আ’ঘা’ত কাটিয়ে ওঠেন, কেরিয়ারে মনোনিবেশ করেন।
এরপরই তার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষের প্রবেশ। তিনি পরিচালক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। ১৯৯২ সালে অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীকে বিয়ে করেছিলেন সাজিদ। কিন্তু বিয়ের ১০ মাসের মধ্যেই দিব্যার মৃ’ত্যু হয়। স্ত্রীর মৃ’ত্যু শো’ক সবে কাটিয়ে উঠছিলেন সাজিদ। তাব্বুর সঙ্গে পরিচয় দিব্যাকে ভুলতে তাকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু শেষমেশ সাজিদও আজীবন তাব্বুর সঙ্গ দেননি।
তাব্বুর পরিবর্তে ওয়ার্দা খান নামে এক সাংবাদিককে ২০০০ সালে বিয়ে করেন সাজিদ। তাব্বুর ব্যক্তিগত জীবনে এটা ছিল দ্বিতীয় আ’ঘা’ত। মনের জোরে এর থেকেও বেরিয়ে এসেছেন তাব্বু। তবে তৃতীয় আ’ঘা’তটা ছিল সবচেয়ে জোরদার। প্রতিশ্রুতি ভ’ঙ্গ, বিশ্বাসঘা’ত’ক’তার য’ন্ত্র’ণা একসময় তব্বুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিল।
তব্বুর জীবনে তৃতীয় পুরুষ দক্ষিণী সুপারস্টার নাগার্জুন। তাব্বুর সঙ্গে ডেট করার সময়ই নাগার্জুন বিবাহিত ছিলেন। তাব্বু সেটা জানতেনও। তাই তারা গোপনে ডেট করতেন। এ ভাবে ১০ বছর তাদের সম্পর্ক থাকে। যা সময়ের সঙ্গে ক্রমশ গভীর হয়। এতদিন তব্বু আশা করে ছিলেন যে তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নাগার্জুন রাখবেন। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি।
১০ বছর পর তাব্বু উপলব্ধি করেন যে, নাগার্জুন তার স্ত্রীকে ছেড়ে তার কাছে আসবেন না। এতদিন তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিযে গিয়েছেন। এরপর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেন তব্বু। ১০ বছরের এই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসেন।
এখন তিনি হ্যাপিলি সিঙ্গেল। নিজেকে এই ভাবেই দেখতে পছন্দ করেন তব্বু। খুব বেছে সিনেমা করেন। নতুন করে সম্পর্কে জড়ানোর এখনই কোনও ইচ্ছা নেই, জানিয়েছেন নিজেই।