রাজনীতির শিকার গুপ্তচর শিশুরা
কলকাতা টাইমস :
উইন্সটন ভীতসন্ত্রস্ত একটা ভাব নিয়ে দরজা খুললেন। কারণ তিনি ডায়েরি লিখেছিলেন। আর তারপর থেকেই তার মনে ভয় ঢুকেছে যে, সে বদ্ধ দরোজার ভেতরে কি লিখেছে সেটা তো জানাজানি হয়ে গেছে।
তাই তার ভয় এই বুঝি টহলরত থট পুলিশের দল এসে হাজির। কিন্তু যিনি এলেন তিনি মিসেস পারসন। তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। মহিলার স্বামী দূরে কোথাও গেলে তিনি জলের পাইপ মেরামতের মতো ছোটখাটো সাহায্যের জন্য আসেন।
উইন্সটন দ্রুত মিসেস পারসনের ফ্ল্যাটে গমন করেন। আর সেখানে তার জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। সেখানে তার সঙ্গে পারসনের এক সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। সেটি একটি বাচ্চা ছেলে। কিন্তু সে জুনিয়র স্পাই গ্রুপের সদস্য। তাকে দেখামাত্র সে উইন্সটনকে অভিযুক্ত করে। জুনিয়র স্পাইজ নামে ওসেনিয়ায় একটি সংগঠন আছে।
যার কাজ হলো সরকারের প্রতি যারা অনুগত নয়, তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি করা। আর এরকম আনুগত্যহীন নাগরিকদের তারা পাকড়াও করতে সিদ্ধহস্ত। মিসেস পারসন এমনকি নিজেই তার ঈর্ষাকাতর সন্তানকে ভয় পান বলেই প্রতীয়মান হয়। সেই সন্ধ্যায় স্থানীয় পার্কের খোলা স্থানে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় রাজনৈতিক শত্রুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার সন্তান সেই দৃশ্য দেখতে যাওয়ার বায়না ধরেছিল। কিন্তু মিসেস পারসন যেতে দেননি।
উইন্সটন তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। ঘুমিয়ে পড়েন। আর স্বপ্ন দেখেন যে, তার শিয়রের কাছে ও’ব্রায়ান এসেছেন। আর তাকে বলছেন, যেখানে কোনো অন্ধকার নেই, সেখানে আমি তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। এবিষয়ে উইন্সটন তার ডায়েরিতে লিখলেন থটক্রাইম পুলিশের হাতে তিনি মারা গেছেন। তিনি এখন মৃত ব্যক্তি। এটা তিনি ডায়েরিতে লেখেন। আর তারপরই বইটি লুকিয়ে ফেলেন।
উইন্সটন স্বপ্নে আরো দেখেছিলেন যে, তিনি তার মায়ের সঙ্গে একটি ডুবন্ত জাহাজে উঠেছেন। তিনি নিজকে অদ্ভুতভাবে দায়ী করলেন। ভাবলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দলের ওপর ক্রাকডাউন চালিয়েছিল। সেই ঘটনায় তার নিজের মা হারিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি একটি অচেনা রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন। দেশটির নাম গোল্ডেন কান্ট্রি।
সেই সোনালি দেশের মেয়েটির চুল ঘন কালো। হঠাৎ মেয়েটি তাঁর কাপড় খোলেন। নগ্ন বসনা হন। আর দৌড়ে এসে তাঁকেই জাপটে ধরেন। এই কর্মটি ছিল ওই মেয়েটির দিক থেকে স্বাধীনতার অনুশীলন, যে স্বাধীনতা ক্ষমতাসীন দলটি বাজেয়াপ্ত করে চলছিল।
তার ঘুম ভাঙ্গলো। শুধু অস্ফুটে তার মুখ থেকে বেরুলো ‘শেক্সপিয়ার।’ এই শব্দটি কোথা থেকে কিভাবে তার মুখ থেকে বেরুলে সেটা তার অজানা। এসময় তীব্র নিনাদে তার কান ঝালাপালা করে হুইসেল বাজলো। এর অর্থ হলো অফিসের চাকুরে কর্মীদের এখন অবশ্যই জাগতে হবে। তবে তার আগে সারতে হবে কঠোর ব্যায়াম।
আর অনুশীলন করতে করতেই তার মাথায় চিন্তা এলো তার শৈশব সম্পর্কে, যা কেবল তিনি খুব অল্পই স্মরণ করতে পারেন। যেহেতু বিগ ব্রাদারের রাষ্ট্রে কারো কোনো আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টস রাখা নিষিদ্ধ ছিল, তাই উইন্সটন তার শৈশবের কোনো স্মৃতির নিদর্শন দেখতে পায়নি।
উইন্সটন ভাবলেন ইউরেশিয়া এবং ইস্ট এশিয়ার সঙ্গে ওসেনিয়ার সম্পর্ক কি হতে পারে। সরকারি ইতিহাস বলেছে, ওসেনিয়া সর্বদাই ইউরোশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং ইস্ট এশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেই চলেছিল। কিন্তু উইন্সটন জানতেন যে, রেকর্ডপত্র সব বদলে ফেলা হয়েছে।
উইন্সটন স্মরণ করলেন যে, ১৯৬০ সালের আগে কেউ বিগ ব্রাদারের কথা শোনেননি। কিন্তু এখন ইতিহাসের বইয়ে লেখা হয়েছে যে, বিগ ব্রাদার একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক হিসেবে ১৯৩০-এর দশকেই জাতীয় জীবনের পাদপ্রদীপে এসেছিলেন।
উইন্সটন যখন এসব বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছিলেন তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে, টেলিস্ক্রিন থেকে একটি গায়েবি আওয়াজ ভেসে আসছে। তার নাম ধরে ডাকছে। যথেষ্ট কাজ না করার জন্য তাকে তিরস্কার করা হলো। উইন্সটন ঘন ঘন শারীরিক কসরৎ শুরু করলেন। তার গরম নিঃশ্বাস নিজকেই ছেঁকা দিচ্ছিল।