নারকেল তেল নাকি একটা ‘খাঁটি বিষ’: দাবি বিজ্ঞানীর
কলকাতা টাইমস :
নারকেল তেলকে আমরা চুলের যত্নে সেরা বলেই জানি। কিন্তু রূপচর্চা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যের দেখভালেও যে নারকেল তেল ব্যাপক জনপ্রিয় ও ভরসার জিনিস, তা অনেকেই জানেন না। যদিও ভোজ্য তেল হিসেবে নারকেল তেলের নানা গুণের কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। একে রীতিমতো ‘সুপারফুড’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এই তেলে রান্নার প্রধান উপকরণ।
গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম খাওয়ার তেল হিসেবে নারকেল তেল নিয়ে নানা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। অথচ এরই মাঝে বিপরীত কথা বললেন হার্ভার্ডের প্রফেসর ড. কারিন মিচেলস। তিনি এই তেলকে সবচেয়ে বাজে খাবার হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি জানান, মানুষের কোনো গবেষণাতেই নারকেল তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ভালো তা উঠে আসেনি। এই তেল পুরোপুরি একটা বিষ। নারকেল তেল একটা ‘খাঁটি বিষ’।
তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ফ্রেইবার্গে দেয়া এক বক্তব্যে ড. কারিন বলেন, নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড রয়েছে। ইন্টারনেটে এই তেলকে রীতিমতো সুপারফুড বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুল থেকে শুরু করে স্থূলতার সমস্যা নিরাময়ে এই তেলের কথা বলা হয়। কিন্তু নারকেল তেলের ৮০ ভাগই ফ্যাট। যা কিনা গরুর মাংসের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি এবং চর্বিযুক্ত যেকোনো খাবারের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ।
রক্তে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে নারকেল তেলের তুলনাই হয় না। এ বিষয়টি সমর্থন করে এনএইচএস এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন।
এর পরিবর্তে বরং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ তেলযুক্ত মাছ, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার কিংবা অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খাওয়া উচিত। অন্যদিকে, ভেজিটেবল, সানফ্লাওয়ার বা অলিভ ওয়েল যে শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে তা প্রমাণিত।
আবার নারকেল তেল আলঝেইমার্স রোগীদের জন্যে উপকারী বলে যে দাবি করা হয়েছে, বিজ্ঞনীদের মতে তা প্রমাণে আরো বেশি গবেষণা দরকার।
ড. কারিন তুলে ধরেন ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাইন্ডেশনের গুয়েনেথ প্যালট্রো এবং হোলান্ড অ্যান্ড বেরেটের কথা। তাদের গবেষণায় বলা হয়, নারকেল তেল খাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাওয়ার পক্ষে কোনো ধরনের শক্ত বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা নেই।
পুষ্টিবিজ্ঞানী লিলি সুটার বলেন, সম্প্রতি ব্রিটিশরা নারকেল তেলের প্রতি ঝুঁকেছে। অনেকেই দাবি করছেন যে, এই তেল খেয়ে তারা নানা ধরনের উপকারিতা পাচ্ছেন। তাদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়েছে। এমনকি আলঝেইমার্সের চিকিৎসাতেও সুফল মিলছে। কিন্তু এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে, এই তেলে আছে বলতে কেবল সম্পৃক্ত ফ্যাট। কাজেই যদি খেতেই হয় তবে প্রতিদিন নারীদের ২০গ্রাম এবং পুরুষদের ৩০গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।