কফিন (গল্প )
[kodex_post_like_buttons]
অমৃতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কফিনটা বয়ে এনেছিল সার্ভিসের বন্ধুরা। রাখা হয়েছিল টালির চাল, মাটির মেঝের লম্বা বারান্দায়। বাড়ি তখন ভেঙ্গে পড়ছে ভিড়ে। পাড়া প্রতিবেশী, পরিজনরাও ছিল সেই ভিড়ে।কান্না হাহুতাশ ভাল ভাল প্রশংসা দিয়ে গাথা ছিল সে কথার নেকলেস।সাথে ছিল নানান সুপরামর্শ। এবং অহেতুক আকম্মা ব্যস্ততা।
“আহাঃ,কফিনটা পূব-দক্ষিণ করে রাখ হে। মাথায় গুলিটা লেগে ছিল তো উত্তরে রাখা বন্দুক থেকে কিনা।“
“আরে আরে ধূপকাঠিগুলো কফিনটা থেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখ না, জাতীয় পতাকায় আগুন ধরে যেতে পারে। “
“মন্ত্রী আসছেন, ওনার জন্য একটা চেয়ার বার করে রাখলে হয় না?”
“আঃ, এদিকটা ফাঁকা করে দিন, ফোর্সএর লোকেরাতো এখানে দাঁড়িয়েই গান সেলুট দেবে। “
“আরে ওর বুড়ি মাকে একটু গরম দুধ দিলে কেমন হয় দেখুন না।জ্ঞান নেই? আহা রে !”
“বউটা কই? ওকে কফিনের সামনে নিয়ে এলেতো হয়,বাক্সটা ছুঁয়ে থাকলে তবুতো স্বামীর কাছে রইল। “
“মোটে তিন মাস বিয়ে হয়েছে এর মধ্যেই বিধবা,কচি বয়েস,কি করে থাকবে বলুনতো?”
“আমিতো ভেবেই পাচ্ছি না”।দু এক জন এ ওকে কনুই মেরে নিঃশব্দে ইতর রসিকতা দেখায়।রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ নিয়ে আলোচনা হয়। শোক ছাপিয়ে- খুনের নিষ্ঠুরতা ছাপিয়ে, আর এক জাতের অবদমিত হনন লালসা চলতে থাকে।শোকের শরীরে শরীর সাধনা। সবাই তান্ত্রিক! “সে তোমার ভাবতে হবে না, চাকরি দেবে বলেছে না? দেখো বছর ঘুরতে না ঘুরতে ঠিক একটা হিল্লে করে নেবে। মরবেতো বুড়ি মা টা।
সহসা মন্ত্রী আসায় একটা হৈ চৈ উঠল।লাইন করে ফোর্সএর লোকেরা দাঁড়াবার সময় একচোট ঠ্যালাঠেলিতে দুচারটে অস্ফুট খিস্তি শোনা গেল। টিভির লোকেরা ঢুকে পড়ায় শোকের হাওয়ায় চলে এলো সাবান সাবান গন্ধ।দু এক জন, মন্ত্রীর গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে গেলে, মন্ত্রী একটু টলে গেলেন।দু পক্ষেরই মুখের শোকার্ত অভিব্যক্তি ক্যামেরার সামনে খানিক টোল খেল।
চার পাঁচজন মহিলা আলুথালু পোষাকের বউটিকে কফিনের সামনে দাঁড় করানো মাত্র সে ঝাপিয়ে পড়ল কফিনের ওপর। একটা আর্ত চিত্কার।ফ্যাট্ ফ্যট্ করে গোটাকয় রাইফেলের গুলি আকাশে উঠেগেল।শ্রদ্ধা!
টিভির ক্যামেরা বউটির শাঁখা পলা পরা হাতে স্থির হয়ে রইল অনেকক্ষণ। অনর্গল বলে চলেছে সাংবাদিক।
এবার মন্ত্রীর ঘোষণা। কি কি দেওয়া হবে, কি কি পাবে এই পরিবার তার ফর্দ।বউটি নিথর। মা অজ্ঞান।
কফিনটা সরকারি সম্মানে উঠিয়ে শোকযাত্রীরা রওনা দিল শ্মশানের দিকে।
জ্ঞান ফিরে পেয়ে বিধবা মা ছেলের মুখটা শেষবারের মত একবার দেখবেন বলে পাগলের মত দৌড় শুরু করলেন শোকযাত্রার পিছন পিছন। তার মুখে এক কথা—”খোকা, তুই কার সাথে, কোন যুদ্ধ প্রাণ দিলি বাবা বলে যা, একবার বলে যা বাপ, একবার বলে যা! “
দূর থেকে কানে আসছে একটা যান্ত্রিক গুনগুনানি -“শহীদ —অমর রহে”!
নামহীন, গোত্রহীন প্রাণ, এমন অসংখ্য কফিন, বাঁশের কাঠের খাটে, সরকারি বেসরকারি সম্মান নিয়ে বা না নিয়ে অবিরল চলেছে শ্মশানে কবরখানায়।ক্রমশ বড় হচ্ছে এই স্রোত, বাড়ছে পরিধি।
বড় হচ্ছে শোকযাত্রীর ভিড়। লম্বা হচ্ছে শহীদের তালিকা এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়!
কফিনটা বয়ে এনেছিল সার্ভিসের বন্ধুরা। রাখা হয়েছিল টালির চাল, মাটির মেঝের লম্বা বারান্দায়। বাড়ি তখন ভেঙ্গে পড়ছে ভিড়ে। পাড়া প্রতিবেশী, পরিজনরাও ছিল সেই ভিড়ে।কান্না হাহুতাশ ভাল ভাল প্রশংসা দিয়ে গাথা ছিল সে কথার নেকলেস।সাথে ছিল নানান সুপরামর্শ। এবং অহেতুক আকম্মা ব্যস্ততা।
“আহাঃ,কফিনটা পূব-দক্ষিণ করে রাখ হে। মাথায় গুলিটা লেগে ছিল তো উত্তরে রাখা বন্দুক থেকে কিনা।“
“আরে আরে ধূপকাঠিগুলো কফিনটা থেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখ না, জাতীয় পতাকায় আগুন ধরে যেতে পারে। “
“মন্ত্রী আসছেন, ওনার জন্য একটা চেয়ার বার করে রাখলে হয় না?”
“আঃ, এদিকটা ফাঁকা করে দিন, ফোর্সএর লোকেরাতো এখানে দাঁড়িয়েই গান সেলুট দেবে। “
“আরে ওর বুড়ি মাকে একটু গরম দুধ দিলে কেমন হয় দেখুন না।জ্ঞান নেই? আহা রে !”
“বউটা কই? ওকে কফিনের সামনে নিয়ে এলেতো হয়,বাক্সটা ছুঁয়ে থাকলে তবুতো স্বামীর কাছে রইল। “
“মোটে তিন মাস বিয়ে হয়েছে এর মধ্যেই বিধবা,কচি বয়েস,কি করে থাকবে বলুনতো?”
“আমিতো ভেবেই পাচ্ছি না”।দু এক জন এ ওকে কনুই মেরে নিঃশব্দে ইতর রসিকতা দেখায়।রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ নিয়ে আলোচনা হয়। শোক ছাপিয়ে- খুনের নিষ্ঠুরতা ছাপিয়ে, আর এক জাতের অবদমিত হনন লালসা চলতে থাকে।শোকের শরীরে শরীর সাধনা। সবাই তান্ত্রিক! “সে তোমার ভাবতে হবে না, চাকরি দেবে বলেছে না? দেখো বছর ঘুরতে না ঘুরতে ঠিক একটা হিল্লে করে নেবে। মরবেতো বুড়ি মা টা।
সহসা মন্ত্রী আসায় একটা হৈ চৈ উঠল।লাইন করে ফোর্সএর লোকেরা দাঁড়াবার সময় একচোট ঠ্যালাঠেলিতে দুচারটে অস্ফুট খিস্তি শোনা গেল। টিভির লোকেরা ঢুকে পড়ায় শোকের হাওয়ায় চলে এলো সাবান সাবান গন্ধ।দু এক জন, মন্ত্রীর গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে গেলে, মন্ত্রী একটু টলে গেলেন।দু পক্ষেরই মুখের শোকার্ত অভিব্যক্তি ক্যামেরার সামনে খানিক টোল খেল।
চার পাঁচজন মহিলা আলুথালু পোষাকের বউটিকে কফিনের সামনে দাঁড় করানো মাত্র সে ঝাপিয়ে পড়ল কফিনের ওপর। একটা আর্ত চিত্কার।ফ্যাট্ ফ্যট্ করে গোটাকয় রাইফেলের গুলি আকাশে উঠেগেল।শ্রদ্ধা!
টিভির ক্যামেরা বউটির শাঁখা পলা পরা হাতে স্থির হয়ে রইল অনেকক্ষণ। অনর্গল বলে চলেছে সাংবাদিক।
এবার মন্ত্রীর ঘোষণা। কি কি দেওয়া হবে, কি কি পাবে এই পরিবার তার ফর্দ।বউটি নিথর। মা অজ্ঞান।
কফিনটা সরকারি সম্মানে উঠিয়ে শোকযাত্রীরা রওনা দিল শ্মশানের দিকে।
জ্ঞান ফিরে পেয়ে বিধবা মা ছেলের মুখটা শেষবারের মত একবার দেখবেন বলে পাগলের মত দৌড় শুরু করলেন শোকযাত্রার পিছন পিছন। তার মুখে এক কথা—”খোকা, তুই কার সাথে, কোন যুদ্ধ প্রাণ দিলি বাবা বলে যা, একবার বলে যা বাপ, একবার বলে যা! “
দূর থেকে কানে আসছে একটা যান্ত্রিক গুনগুনানি -“শহীদ —অমর রহে”!
নামহীন, গোত্রহীন প্রাণ, এমন অসংখ্য কফিন, বাঁশের কাঠের খাটে, সরকারি বেসরকারি সম্মান নিয়ে বা না নিয়ে অবিরল চলেছে শ্মশানে কবরখানায়।ক্রমশ বড় হচ্ছে এই স্রোত, বাড়ছে পরিধি।
বড় হচ্ছে শোকযাত্রীর ভিড়। লম্বা হচ্ছে শহীদের তালিকা এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়!