ভাবা যায় ! জোঁক-ইঁদুর সংগ্রহই ছিল দামি পেশা
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
বিশ্বে কত ধরনের পেশাই না আছে। কোথাও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, কাউকে জড়িয়ে ধরাও এখন পেশার মধ্যেই পড়ে। এমন আরও অনেক বিচিত্র পেশার কথা সামনে আসে বিভিন্ন সময়। তবে জানেন কি? এমন সব বিচিত্র পেশা শুধু বর্তমানেই নয়, মধ্যযুগেও ছিল। তখনকার পেশাগুলো ছিল আরও অদ্ভুত।
সেসময় মানুষের মল পরিষ্কার করাও ছিল এক শ্রেণির মানুষের পেশা। এখানেই শেষ নয়, আরও ছিল জোঁক সংগ্রহ করা, ইঁদুর ধরা, অন্যের বমি সংগ্রহ, বগলের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি। এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত পেশার অস্তিত্ব ছিল মধ্যযুগে। এমনকি অন্যের হয়ে চাবুকের মার খাওয়াও ছিল পেশা। নাপিতরা করতেন দাঁতের চিকিৎসা!
বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্যযুগের বেশিরভাগ মানুষই ছিল নোংরা প্রকৃতির। বাড়িঘর তো দূরের ব্যাপার নিজের শরীরও ঠিকভাবে পরিষ্কার করত না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার কি জানেন? মধ্যযুগে মানুষ গোসল করতেন না। এমনকি বাড়িতে ছিল না কোনো স্নানঘর কিংবা টয়লেট। টয়লেট তারা করত বাড়ির বাইরে যেখানে সেখানে।
স্পেনের রানি ইসাবেল জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করেন। যেদিন তার জন্ম হয় এবং দ্বিতীয় ও শেষবার তার বিয়ের দিন। ফ্রান্সে রাজপ্রাসাদকে বলা হয় ‘শাঁতো’। ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রাঁসোয়া ফ্রান্সজুড়ে এমন অনেক প্রাসাদ বা শাঁতো গড়েছেন। একেকটা প্রাসাদে শত শত কক্ষ।
তবে মজার ব্যাপার হলো, এতো বড় প্রাসাদে ছিল না কোনো বাথরুম। এখন ছবির মতো এখনকার যে ঝকঝকে ইউরোপ দেখতে পান। তা একসময় ছিল বস্তির মতো। তখনকার ১০ হাজার রাজ প্রাসাদসহ কর্মচারী ও চাকরদের থাকার স্থান সবকিছুই ছিল খুবই অপরিষ্কার।
প্রায় সব প্রাসাদের রান্নাঘর ছিল উন্মুক্ত। রান্নাঘরে ধূলা ময়লা, দুর্গন্ধ আর ইঁদুরে ভরা থাকত। তার মধ্যেই তৈরি করা হতো খাবার। সেসময় ইউরোপের মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখত এমনকি টয়লেটও করত। রোমানীয়রা এতোই অলস ছিল যে উঠে গিয়ে বমি করতে পারত না। তারা বার বার খাওয়ার জন্য একবার খাওয়ার পরই বমি করে পেট পরিষ্কার করত। এজন্য একদল কর্মী নিয়োগ দেওয়া ছিল যাদের কাজ ছিল মালিকের বমি সংগ্রহ করা। আর মালিকেরা বিছানায় শুয়ে শুয়েই খাবার খেত। এজন্য কষ্ট করে উঠেও বসতে পারত না।
মধ্যযুগে আরেকটি পরিচিত পেশা ছিল জোঁক সংগ্রহ করা। বিশেষ করে নারীরাই বেশি এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। নর্দমায় নেমে জোঁক খুঁজে নিয়ে আসতেন তারা। এসময় অসংখ্য জোঁকের কামড় সহ্য করতে হত তাদের। জোঁক সেসময় ব্যবহার হত ওষুধ তৈরি ও নারীদের রূপচর্চায়। সমাজের ধনী শ্রেণির নারীরা জোঁক দিয়ে রূপচর্চা করতেন।
এই জোঁক শুধু ধরে আনলেই চড়া দাম পাওয়া যেত না। এজন্য এদের রক্ত খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করতে হত। অর্থাৎ জোঁক ধরে আনার পর এগুলোকে বিভিন্ন মানুষের গায়ে লাগিয়ে রক্ত খাওয়ানো হতো। রক্ত খেয়ে জোঁকগুলো যখন ফুলে ঢোল হয়ে যাবে তখন এগুলো ব্যবহার করা হবে। জোঁকগুলোকে মেরে এর রক্ত নারীরা ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও এর থেরাপিও নিতেন তারা। শরীরের ফোলাভাব ও ব্যথা দূর করতে জোঁকের থেরাপি নিতেন অনেকে।
আবার এখনকার মতো তখনকার সময়েও নারীদের ফর্সা হওয়ার খুব চল ছিল। বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতেন ত্বক ফর্সা করতে। জোঁক ব্যবহার হতো সবচেয়ে বেশি। পুরো মুখে জোঁক লাগিয়ে রাখা হত। যেন মুখের রক্ত জোঁক চুষে খেতে পারে। মুখ রক্তশূন্য হয়ে ফ্যাকাসে দেখাতো তখন। ১৮০০ শতকে জার্মানি, ইংল্যান্ডে জোঁক আমদানি রপ্তানি ছিল অনেক বেশি।
ইঁদুর ধরা ছিল মধ্যযুগের আরেকটি দামি পেশা। সেসময়ের মানুষেরা যেহেতু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তিত ছিল না। তাই পুরো বাড়িতে থাকত প্রচুর ইঁদুর। দেখলে যেন মনে হবে ইঁদুরের বাড়িতেই থাকতে এসেছে কয়েকজন মানুষ। রান্নাঘর, শোবার ঘর কোথাও বাকি নেই। সব জায়গায় ইঁদুর আর ইঁদুর। তাই ইঁদুর তাড়াতে নিয়োজিত ছিল একদল কর্মী। যাদের কাজ ছিল এলাকা থেকে ইঁদুর তাড়ানো।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সেই গল্পের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। একটি শহরের ইঁদুর তাড়াতে এক বাঁশিওয়ালাকে আনা হয়। কিন্তু কাজের পর তার টাকা দেয়নি শহরবাসী। এজন্য মনের দুঃখে এমন এক সুর তোলেন বাঁশিতে যে শহরের সব শিশু-কিশোর তার পিছু পিছু চলে যায়। ফিরে আসেনি আর কোনোদিন। তবে এই গল্পের সত্যতা নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক থাকলেও পেশা যে ছিল সেটা নিশ্চিত।
১৯ শতকে ইউরোপে ইঁদুর ধরার একটি অপরিহার্য কাজ ছিল। রোগ-ব্যাধি কমানো ও খাদ্য সংরক্ষণের জন্য তারা ইঁদুর ধরার কাজ করতেন। তবে এই কাজটি সাধারণত সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষেরাই করতেন। বেশ ভালো আয়ও হতো তাদের। তবে ধনী শ্রেণির মানুষেরা ইঁদুরের ব্যাপারে ছিল খুবই কৌতূহলী। এজন্য অনেকেই নাকি সেসময় ইঁদুরকে বাড়িতে পুষতেন। তাই তো ইঁদুর ধরে ধনী শ্রেণির মানুষের কাছে বেশ চড়া দামে বিক্রি করতেন এই পেশার মানুষেরা।