চালিয়ে যান এই ৭ ‘বদঅভ্যাস’, হবে স্বাস্থ্যের উন্নতি

কলকাতা টাইমস :
আমরা সারাদিন এমন অনেক কাজ করে থাকি যাকে সাধারণত বড় অভ্যেস বলেই জানি। যে কাজগুলোকে স্বাস্থের জন্য খারাপ মনে করা হয়। কিন্তু জানেন কি এগুলির মধ্যে অনেকগুলোই আসলে আমাদের জন্য উপকারী। ভাবছেন বদঅভ্যাস, আবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো! ঠিকই শুনেছেন।বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সত্যি এমন ৭টি বদঅভ্যেস আছে যেগুলি ভালো। এর মধ্যে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ার মতো বেশ কয়েকটি কাজও রয়েছে । আসুন জানা যাক আর কি রয়েছে এই তালিকায় –
১) সকালের জলখাবার না খাওয়া : সকালের নাশতা না খাওয়াকে অনেক গবেষণাতেই খারাপ অভ্যাস বলা হয়। মনে করা হতো এতে ওজন বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এর উল্টোটা ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্ট বাদ দিলেই বরং তা ওজন কমাতে কাজে আসে।
তবে যখন তখন ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়াটা উপকারী নয়। বরং ‘ফাস্টিং’ ধরনের ডায়েট করতে গেলেই কেবল তা উপকারী। এই নিয়মে দিনে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং বাকি ৮ ঘণ্টায় খাওয়া-দাওয়া সারতে হয়। এই নিয়মে সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাওয়া যায়, ফলে ব্রেকফাস্ট বাদ পড়ে। এই উপায়টা শুধু ওজন কমাতে নয় বরং ক্যান্সার রোধ এবং আয়ু বাড়ানোর মতো স্বাস্থ্যের আরও কিছু উপকারে আসে।
২) কফি খাওয়া : কফি খাওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মতামত দেখা যায়। কিছু গবেষণা বলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কফি। কিন্তু অনেক গবেষণা এটাও বলে যে নিয়মিত কফি পান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সহ অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়, যেমন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং হৃদরোগ থেকে মুক্তি।অবশ্য এসব ক্ষেত্রে ইচ্ছামত কফি পান করাটা বাঞ্ছনীয় নয়। ডাক্তাররা জানান, দিনে ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করাই ভালো। সে হিসেবে নিরাপদে দিনে ৩-৪ কাপ কফি পান করতে পারেন আপনি।
৩) ডিম খাওয়া : অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাতেই ডিম খেতে মানা করেন ডাক্তাররা। ডিমে আছে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল, চর্বি, আমিষ এবং অনেক ভিটামিন ও মিনারেল। উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই ডিম এড়িয়ে চলেন। আসলে কিন্তু ডিমের তেমন কোনো দোষ নেই। অনেকেই ডিমের সাদা অংশটা শুধু খান। এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। পুরো ডিমে অনেক উপকারী পুষ্টি উপাদান থাকে। আর ডিমের কোলেস্টেরলটা আসলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৪) চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া : গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের কিছু উপদেশ অনুযায়ী চলতে গিয়ে কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে আমেরিকানরা। তারা আশা করছিল এতে ওজন কমবে, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আদতে তা হয়নি। কিন্তু উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বাড়ে, এ ধারণাটি রয়েই গেছে। ধারণাটি সঠিক নয়।
৫০ হাজার মহিলার ওপর করা ৮ বছরের একটি গবেষণায় দেখা যায়, কম চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেও তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমেনি। তাদের ওজনও তেমন কমেনি।বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, মাছ, বাদাম ও অ্যাভোকাডো থেকে পাওয়া চর্বি আসলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে।
৫) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার : ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করাটাকে সারা বিশ্বেই খারাপ চোখে দেখা হয়। বলা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কারণেই স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অনেক গবেষণার পর দেখা যায়, আসলে স্মার্টফোন ব্যবহার বা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী।
গত বছর সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সেজ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশিরভাগ তরুণদের জন্যই স্মার্টফোন ব্যবহার ক্ষতিকর নয়। বরং নিজ বয়সী মানুষদের থেকে মানসিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে তা অনেক উপকারী।
৬) লম্বা সময় ধরে ভারী ব্যায়াম করা : নিয়মিত ভারী ব্যায়াম না করলে শরীর সুস্থ থাকবে না, এমন ধারণা অনেকের। আসলে কিন্তু খুব কম সময় শরীরচর্চাও উপকারী। এমনকি গবেষণায় এটা বলা হয়, ৭ মিনিটের ভারী ব্যায়ামেই অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৭) দিনের বেলায় ঘুমানো : দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাসটাকে অলসতা মনে করেন অনেকে। কিন্তু এতে পাওয়া যায় অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। বিশেষ করে রাতে ঘুম কম হলে দিনে ঘুমানোটা উপকারী। ব্রেইন, বিহেভিয়র অ্যান্ড ইমিউনিটি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কম ঘুম হওয়ার পর ৩০ মিনিটের ছোট্ট ঘুম যেমন উপকারী, ১০ ঘণ্টার লম্বা ঘুমও তেমনই উপকারী। আবার হার্ভার্ডের ঘুম গবেষক রবার্ট স্টিকগোল্ডের মতে, সমস্যা সমাধানে অনেকের কাজে আসে দিনের বেলা অল্প সময়ের ঘুম।