করোনা ভুলিয়ে দেবে ভালো-মন্দ স্মৃতি, বাড়াবে দুঃখ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে শুধু শ্বাসতন্ত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, পাশাপাশি বিষণ্নতা, স্মৃতিভ্রংশের মতো মানসিক-স্নায়বিক রোগ ও পক্ষাঘাতের ঝুঁকি বাড়ে। গত ছয় মাসে চিকিৎসা নিয়েছে এমন পাঁচ লাখ কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
গবেষকরা এই বিপুলসংখ্যক রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে খুব বেশি দেখা যায় এমন ১৪টি মানসিক ও স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতটা তা জানার চেষ্টা করেছেন। এই ১৪ রোগের মধ্যে আছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, পারকিনসনস, গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোম (এক ধরনের ফ্লুজনিত উপসর্গ), স্মৃতিভ্রংশ, মনোব্যাধি, ভাবের অসংগতি, উদ্বেগ অসংগতি ইত্যাদি।
গবেষকরা বলছেন, আগে করোনা সংক্রমিতদের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যা নতুন করে বা পুনরায় দেখা দিয়েছে। তবে হাসপাতালে বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যারা ভর্তি ছিল, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির মাত্রা বেশি। মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং করোনাভাইরাস সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা ভোগে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যায়। আর সুস্থ হওয়ার পর অন্তত ১৬ শতাংশ রোগী মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যায় ভোগে। ৪৪ শতাংশের ক্ষেত্রে এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়। গুরুতর অসুস্থদের বেলায় এটি বেশি দেখা যায়।
অক্সফোর্ডের গবেষকরা বলছেন, হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই মানসিক সমস্যাগুলোর লক্ষণ দেখা যায়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা করোনা রোগীদের বেলায় এই হার ২৮ শতাংশ। আর করোনায় যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেসব রোগী ঘন ঘন জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়, তাদের ৩৬ শতাংশ এই মানসিক রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা স্মৃতিশক্তি বিলোপ বা ডিমন্যাশিয়ায় ভোগে। গুরুতর অসুস্থ বা ডিলিরিয়ামে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ৫ শতাংশ।