সামান্য শরীর খারাপেই নেট ঘটনা ? আপনি এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত নন তো!
অনেক সময় কাজের চাপ ও মানসিক চাপের কারণে মাথাব্যথা বা শারীরিক ব্যাথার মতো লক্ষণগুলি দেখা দেয়। এর থেকে বাঁচতে অনেকে নিজে থেকেই খেয়ে ফেলেন প্যারাসিটামল বা পেইনকিলার। এতে কাজ না হলে, ডাক্তারের সঙ্গে কথা না বলেই নিজে থেকে ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজস্ব লক্ষণগুলি মিলিয়ে দেখলেন এবং তারপর ভাবলেন আপনার ব্রেন টিউমার বা বড় ধরনের কোনও অসুখ হয়েছে। হ্যাঁ আপনি অসুস্থ, কিন্তু আপনার যে রোগটি হয়েছে বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ‘সাইবারকন্ড্রিয়া’। কি বুঝলেন না তো? তবে চলুন এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কাকে বলে সাইবারকন্ড্রিয়া?
সামান্য মাথাব্যথা, শরীরের ব্যথা বা অন্যান্য ছোটখাটো অসুখের উপসর্গ দেখা দিলেই, ডাক্তারকে এড়িয়ে ইন্টারনেটে সব ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ঘেঁটে নিজে থেকে যেকোনও একটি রোগের পরিকল্পনা করে নেওয়াকেই বিজ্ঞানীরা ‘সাইবারকন্ড্রিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সাধারণ অর্থে সাইবারকন্ড্রিয়া হল, যখন একজন ব্যক্তি নিজের বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেন এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই সাইবারকন্ড্রিয়া, কম্পুকন্ড্রিয়া (Compuchondria) নামেও পরিচিত। ভয়ঙ্কর ও সাধারণ রোগের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখতে বর্তমান দিনে অনেকেরই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ঘেঁটে ফেলাটা নিজস্ব অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যার ফলে আতঙ্কে ভুগছেন এই সকল মানুষ।
চিকিৎসকদের মতে এটি একটি বৃহৎ মানসিক সমস্যা, আর এই সমস্যাটির নামই হল সাইবারকন্ড্রিয়া। কোভিডের মাঝেই কেরলে নিপার প্রকোপ, কী এই নিপা ভাইরাস? এর উপসর্গ কী? জেনে নিন বিস্তারিত সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ইন্টারনেটের প্রভাব আমরা ইন্টারনেটে যা কিছু দেখি সবটাই যে সঠিক, তা কিন্তু একেবারেই নয়।
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৫৫ শতাংশের বেশি লোক বিগত বছরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধান করতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই কোনও না কোনও রোগের দ্বারা আক্রান্ত। তারা সকলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের রোগটি নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাবের পরিবর্তে নেতিবাচক প্রভাব বেশি ফেলছে। যার ফলে দেখা দিচ্ছে নানান ধরনের মানসিক সমস্যা, পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে শরীরের নানাবিধ সমস্যাগুলি। এভাবেই ইন্টারনেট প্রভাবিত করছে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর।
আপনি কী সাইবারকন্ড্রিয়াক?
বর্তমান দিনে কেউই এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত নন। সুতরাং আপনিও সাইবারকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত কিনা দেখে নিন তার লক্ষণগুলি – ফোনের ব্যাক কভার হলুদ হয়ে যাচ্ছে? পরিষ্কার করবেন কীভাবে, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
১) প্রতিদিন এক থেকে তিন ঘণ্টা ইন্টারনেটে বিভিন্ন রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা।
২) অসুস্থ থাকার দিনগুলিতে রোগ সম্পর্কে আরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেটে চেক করা।
৩) কোনও রোগ নিয়ে নিজের মধ্যে মারাত্মক ভয় জন্মালে। এই রোগের ঝুঁকি কতটা? আমরা রোগের সম্পর্কে সর্বদা সচেতন ঠিকই, তবে অতি বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং খুঁতখুঁতে ভাব আমাদের মানসিক চাপ এবং উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা আরও বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও, রোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে, রোগ নির্ণয় ও নিজে থেকে ভুল ঔষধ প্রয়োগ করার ফলেও দেখা দিতে পারে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি। কারণ যে লক্ষণগুলি নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে সেগুলি অন্য রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সর্বদাই উচিত।
চিকিৎসা
১) নিজে অনুসন্ধান করে রোগ নির্ণয় না করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে তাদের পরামর্শ নেওয়া। এতে আপনার সমস্যাটি ভালোভাবে কমতে পারে।
২) কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (Cognitive behavioural therapy)এর সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।
৩) সাইকোথেরাপির সাহায্যে এই অভ্যাস ত্যাগ করা যেতে পারে।