November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

মারাত্মক নেশা এখন ‘ডিজিটাল কোকেন’!

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

নলাইনের প্রসার বাড়ায় এখন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সময় ব্যয় করছেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ প্রসার একপ্রকার নেশায় রূপান্তরিত হয়েছে।

মনোবিজ্ঞানীরা অনলাইনের নেশাকে এখন ডিজিটাল কোকেন নাম দিয়েছেন। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সীমাহীন ফেসবুক ফিড নিয়ে ব্যস্ত থাকার ফলে মস্তিষ্কে যে অনুভূতি হয়, কোকেন ঠিক একই ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে।

যৌন হয়রানি, অর্থ চুরি, সম্মানহানি ইত্যাদি বহু ঘটনার পেছনেও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনেকেই এসব কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনারও শিকার হচ্ছে।

ফেসবুকে আসক্তরা যেন মাদকাসক্ত। ফেসবুকে অবস্থানের সময় এমনভাবেই কাজ করেন তারা। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক প্রফেসর অফটির টুরেল বলেন, যারা ফেসবুকে না প্রবেশ করে থাকতে পারেন না তাদের মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার অংশে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। কোকেন নিলে মস্তিষ্কের ঠিক একই অংশে প্রায় একই ধরনের কর্মকাণ্ড চলে। এই নেশা গাড়ির এক্সেলেরাটোরের মতো কাজ করে। অর্থাৎ গতি বাড়তেই থাকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকেই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রাস্তায় চলাচলের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকে ছবি দেখে তারা এত দ্রুত বিক্ষিপ্ত হন যে, রাস্তায় চলাচলের সময় সঠিক বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারেন না। কাজেই বিষয়টি এক অর্থে ভয়ঙ্কর। কারণ রাস্তায় চলাচলের সময় নির্দেশক চিহ্ন না দেখে মোবাইলে ফেসবুকের নোটিফিকেশন দেখতে থাকলে তা দুর্ঘটনা বয়ে আনে।

এ কারণে মানসিক উদ্বেগ বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোন বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গেছে। অনেকেই একে খুবই বিরক্তিকর এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রতিবন্ধক বলে জানিয়েছেন।

মোবাইল ফোন এখন অনেকেরই দৈনন্দিন জীবনধারার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, গড়ে একজন মানুষ এখন প্রতি সাড়ে ছয় মিনিট পর পর একবার করে স্মার্টফোন দেখে নেয়। কিন্তু এটি মানসিকভাবে সন্তুষ্ট করে না। ফলে অসন্তুষ্টি বাড়তেই থাকে।

অনেকেই মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে তিনি একজন দক্ষ মাল্টিটাস্কার হয়ে উঠবেন। একই সঙ্গে কাজ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সামলাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাধিক কাজের দক্ষতা কমে যায়। মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় স্মৃতিশক্তিও কমে যায়। ফলে দৈনন্দিন কাজেও দক্ষতা হ্রাস পায়।

অনেকেই অতিরক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কারণে ভৌতিক কল সিনড্রোম নামে একটি জটিলতায় আক্রান্ত হন। এতে মোবাইলে কোনো কল না আসলেও মনে হতে পারে কল এসেছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায় অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে মস্তিষ্কের ভেতরে হেলুসিনেশন বা বিভ্রান্তির সৃষ্টিকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নামে ‘সামাজিক’ হলেও বাস্তবে মানুষকে অসামাজিক করে তোলে। এতে মানুষ পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন ও স্বার্থপর হয়ে উঠছে। একজন মানুষ যখন অন্যজনের সঙ্গে কথা বলে তখন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সময় নিজের বিষয়ে কথা বলে বাকি সময় অন্যদের কথা শোনে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে সে ৮০ ভাগ সময় ব্যয় করে নিজেকে নিয়ে।

বাস্তব মানুষ আর অনলাইনের মানুষ এক নয়। যে মানুষকে অনলাইনে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী মনে হয় বাস্তবে সে তার বিপরীতটাও হতে পারে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত অনেককেই বাস্তব জগতে এসে স্বপ্নভঙ্গের শিকার হতে হয়।

অনলাইনে কটূক্তি ও হেনস্থার শিকার হওয়া অত্যন্ত সাধারণ বিষয়, যার বড় শিকার শিশু-কিশোর। এক জরিপে দেখা গেছে ৭৯ শতাংশ মানুষই অনলাইনে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। অল্পবয়সে অনলাইনে হেনস্থার শিকার হলে পরবর্তী জীবনে এর বড় প্রভাব পড়ে।

Related Posts

Leave a Reply