দারিদ্র নয় ‘পথশিশু সরাও’ নির্দেশ দিয়ে অভাব লুকোতে চাইছে ভারত
কলকাতা টাইমস :
ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল আমদাবাদের বস্তি। গুজরাতের বিজেপি সরকার ও পুরসভার যৌথ উদ্যোগে শুধু বস্তি সরানোই নয় দারিদ্র আড়াল করতে অবশিষ্ট অংশ গাঢ় রঙের কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই একই ছবি ফের দেখা যাবে বলেই আশংকা রাজনৈতিক থেকে সমাজকর্মী মহলে।
জি-২০ সম্মেলনের অংশ হিসাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে এ বছরের গোড়া থেকে। শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বরে। সেই সম্মেলনও দিল্লির পাশাপাশি দেশের একাধিক বড় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রস্তুতি শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রীদের দিল্লিতে ডেকে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শীর্ষ সম্মেলনের আগে শহর থেকে পথশিশুদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে রাজ্যগুলিকে বলেছে দিল্লির জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে তারা বলেছে, শিশুদের অন্যত্র পুনর্বাসনের রোড-ম্যাপ রাজ্যগুলি জানালে তারাও সহযোগিতা করবে।
শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের পরিবর্তে কেন শিশু কমিশন এই চিঠি পাঠিয়েছে তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে সরকারি মহলে। কমিশনের কাজ শিশুদের অধিকার রক্ষা। তাদের উপর কোনওভাবে অবিচার, অনাচার হলে হস্তক্ষেপ করা। পথশিশুদের সরানো তাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। বরং জোর করে সে কাজ করা হলে হস্তক্ষেপ করার কথা এই সংস্থার।
পথশিশু হিসাবে বিবেচনা করা হয় যারা দিনের অনেকটা সময় রাস্তায় কাটায়, যাদের বেশিরভাগই অনাথ, গৃহহীন এবং ভিক্ষা করে। শিশু স্বার্থে কাজ করা একটি জাতীয় সংস্থার আহ্বায়ক নির্মল গোরানার বক্তব্য, ‘পথশিশুদের সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতিক্রিয়া সবসময়ই ভাসা ভাসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মাঝে মাঝে অভিযান চালায় এবং উদ্ধার হওয়া শিশুদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে হোমে নিয়ে রাখে। এই ধরনের সাময়িক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল পথশিশুদের চোখের আড়ালে রাখা। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আগত বিদেশি প্রতিনিধিদের থেকে পথশিশুদের প্রকৃত চিত্র লুকিয়ে রাখাই নয়া অভিযানের উদ্দেশ্য।’ গোরানার বক্তব্য, সরকারি হোমে উদ্ধার হওয়া পথশিশুদের উপর দুর্ব্যবহার করা হয়।’ প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরের সম্মেলনের সময় বিদেশি পর্যটকেরাও ভারতে আসবেন।
কেন্দ্রীয় সংস্থাটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, শিশুদের নিরাপদ স্থান হতে পারে স্কুল এবং পরিবার। সরকার সেই ব্যাপারে উদাসীন। চলতি নির্দেশিকার অর্থ হল, জি-২০ সম্মেলনের সময় বাবা-মায়েরা যাতে সন্তানদের ঘরের বাইরে বের হতে না দেয়। কারণ, হাজার হাজার শিশুকে সরকারি, বেসরকারি হোমে নিয়ে রাখা অসম্ভব।