বেড়ে চলেছে ‘ডেস্কটপ ডাইনিং’, আতঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
অনেক সময়ই দুপুরের খাবারটি আলস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ চাকরিজীবীকে নিজের টেবিলে বলে লাঞ্চ করতে দেখা যায়। আর এ সংস্কৃতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
নৃতাত্ত্বিক জুন জো লি ১১ বছর ধরে তার অফিসের টেবিলে বসে লাঞ্চ করেন। তিনি অফিসে খাওয়ার বিষয় নিয়ে অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাকে সিয়াটলের এক কর্মজীবী জানান, কাজের টেবিলটাকে খাবার টেবিলটা মনে না করলে প্রতিদিন সেখানে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আবার আরেক আইটি বিশেষজ্ঞ তার ডেস্কে বসে কম্পিউটারের সামনে বসে লাঞ্চ করেন। তিনি অনায়াসেই দুপুরের খাওয়ার জন্যে আলাদা করে রাখা কক্ষটিকে এড়িয়ে যান।
খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানে কর্মীদের অফিসের টেবিলে বসে খাওয়ার অভ্যাসের কথা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা খাদ্যের মেনু ও প্যাকেটজাত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করছে।
বিভিন্ন বিশ্লেষণের পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্মজীবীরা যে প্রক্রিয়ায় লাঞ্চ করছেন তা সত্যিই দুঃখজনক। লাঞ্চ আওয়ারে দুপুরের খাবার খাওয়ার বিষয়টি আলস্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অথচ সকাল থেকে টানা কাজের পর সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় দুপুরের খাবার খাওয়া সত্যিকার অর্থেই বিশ্রাম ও শক্তি ফিরিয়ে আনার সঙ্গে জড়িত।
আমেরিকার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ৬২ শতাংশ পেশাজীবী অফিসের টেবিলে বসেই লাঞ্চ করে থাকেন। সামাজিক বিজ্ঞানীরা একে ‘ডেস্কটপ ডাইনিং’ বলে মন্তব্য করছেন। খেতে খেতে তারা ইমেইল দেখেন, তার জবাব দেন বা সোশাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারেন। অর্ধেক আমেরিকান তাদের লাঞ্চ একাই খেয়ে থাকেন।
কুকুর, ইঁদুর বা মুরগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, এরা অনেকের সঙ্গে খাওয়ার সময় প্রত্যেকে বেশি খায়। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, মানুষের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ অন্য প্রাণী খায়। কিন্তু মানুষ আয়োজনের সঙ্গে খাবার উপভোগ করে।
কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টা সত্য। অন্যের সঙ্গে থাকা অবস্থায় মানুষ ৪৪ শতাংশ বেশি খায়। যত বেশি মানুষ উপস্থিত থাকবে, তত বেশি খাবে প্রত্যেক মানুষ।
অফিসে টেবিলে লাঞ্চ করার মাধ্যমে কর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তাদের মাঝে শেয়ারিং মনোভাব গড়ে উঠছে না। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড ব্র্যান্ড ল্যাব এর পরিচালক ব্রায়ান ওয়ানসিঙ্কের মতে, ডেস্কটপ ডাইনিং পরিশ্রমী মনোভাবের লক্ষণ নয়। এ কাজের সময় ফেসবুক দেখা বা ইমেইল পড়া কোনো কাজের অংশ হতে পারে না।