লাগবে না মাটি, মানুষের প্রস্রাব থেকে ইট!
কলকাতা টাইমস :
দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষকরা বলছেন তাঁরা মানুষের প্রস্রাব ব্যবহার করে ইট তৈরি করেছেন। ব্যাকটেরিয়ার কলোনির সঙ্গে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ইট তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মানুষের বর্জ্য ব্যবহার করে প্রস্তুত এই ইটের ব্যবহার বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন প্রস্রাব, ক্যালসিয়াম, বালি এবং ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ধূসর ইটগুলো ল্যাবে প্রস্তুত হয় আট দিনের বেশি সময় ধরে। তবে এই ইটে কিন্তু প্রস্রাবের গন্ধ নেই।
একই প্রক্রিয়ায় ইউরিয়াও উৎপাদিত হয়। ইটগুলো এই ইউরিয়া ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ইউরিয়া একটি রাসায়নিক যা প্রাকৃতিকভাবে প্রস্রাবে পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে এটি সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া থেকে ইট প্রস্তুতের প্রক্রিয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে নতুন এই ইট প্রথমবারের মতো মানব মূত্র ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অব কেপটাউন’র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ডিলন র্যান্ডাল বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন প্রস্রাব করি এবং তা নর্দমার ভেতর নিক্ষেপ করি। আমরা যদি তা উদ্ধার করে তা থেকে ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করতে পারি তাহলে ক্ষতি কি?’ তিনি বলেন, সাগরে যে পদ্ধতিতে কোরাল তৈরি হয়, এটি মূলত সেই পদ্ধতি।
যে ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে ‘ইউরেজ’ নামক এনজাইম তৈরি হয়, সেই ব্যাকটেরিয়াই বালিকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এক জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রস্রাব থেকে ইউরিয়ার কণা ভেঙে দেয় ইউরেজ। একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে এটি।
এই প্রক্রিয়াতেই প্রস্রাব থেকে বালি জমাট বাঁধিয়ে তৈরি হয় ইট। যদি কেউ লাইমস্টোন ইটের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি শক্ত করতে চায় এই ইটকে, তাহলে জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে আরেকটু বেশি সময় দিতে হবে।
ইট প্রস্তুতের জন্য প্রচুর প্রস্রাব প্রয়োজন হয়। এক পিস ইটের জন্য প্রয়োজন প্রায় ২০ লিটার প্রস্রাব।
প্রচলিত ইট তৈরিতে উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এজন্য সেগুলোকে পুড়ানো হয় যা অনেক কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। কিন্তু প্রস্রাবের সাহায্যে তৈরি ইটে এসব কিছুই লাগবে না। তাই পরিবেশও দূষিত হবে না।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সুজান ল্যাম্বার্ট, যিনি প্রথম ইট তৈরি করে গবেষণার ধারণাটি প্রমাণ করেছিলেন, বলেন, ‘ছেলেদের বাথরুমের বিপরীতে আমার ল্যাবরেটরি। ফলে ইট তৈরির জন্য প্রস্রাব আমি সেখান থেকে পাই।
সুজান আরো বলেন, আগামী দুই-এক দশকের ভেতর বাণিজ্যিকভাবে এই ইট প্রস্তুতের যথেষ্ট সম্ভাবনা আমি দেখছি। কিন্তু এই কাজের জন্য আরো অনেক ল্যাবরেটরি প্রয়োজন।’