উচ্চতা সুবিধের হলেও কত মারাত্মক ক্ষতি করে জানেন ?
লম্বা মানুষেরা সামাজিক ও পেশাগত জীবনে কিছু সুবিধা ভোগ করে থাকেন। যেমন, লম্বা মানুষেরা বিপরীত লিঙ্গসহ অন্যদেরকে বেশি আকর্ষণ করেন এবং পেশাগত জীবনে বেশি আয়-উপর্জন করতে পারেন। তবে লম্বা হওয়ার কিছু খারাপ দিকও রয়েছে।
চলার পথে মাথা ঠুকে যাওয়ার মতো অংসখ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় লম্বা মানুষদের। তবে দৈহিক উচ্চতা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রাথমিক একটি দিক এটি। এখানে এমন ৭টি স্বাস্থ্যগত ইস্যু তুলে ধরা হলো যেগুলো কাউকে গড়পড়তা আকৃতির চেয়ে অতিরিক্ত লম্বা বা অতিরিক্ত বেঁটে হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে:
১. আয়ু কম
লম্বা মানুষদের আয়ু একুট কম হয়। বিবর্তনবাদি দৃষ্টিভঙ্গিতে বলতে গেলে, “দ্রুত বেড়ে ওঠা এবং লম্বা হওয়ার মানে হলো আপনার আয়ু কম হবে। ইদুরদের ওপর চালানো পরীক্ষায় এমনটাই দেখা গেছে।” তবে মানুষের বেলায় এই তত্ব কীভাবে কাজ করে তা পরিষ্কার নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু জিন আছে যেগুলো একইসঙ্গে মানুষের বেঁটে হওয়া এবং দীর্ঘায়ু হওয়ার জন্য দায়ী। আর যে দেশে মানুষের সংখ্যা কম তারা দীর্ঘায়ু হন। তবে মানু্ষের দৈহিক উচ্চতা তার আয়ু কম বা বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ভুমিকা রাখে তা জানাটা একটু কঠিনই বটে। নাকি অন্যান্য বৈশিষ্ট- পুষ্টি, আর্থ-সামাজিক শ্রেণিগত অবস্থান এবং রোগবালাই এ ক্ষেত্রে বেশি ভুমিকা রাখে।
২. ক্যান্সার
বেশি লম্বা হওয়ার সঙ্গে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংযোগ রয়েছে! কারণ দেহ যত বড় হবে জীব কোষের সংখ্যাও তত বেশি হবে। আর আনুপাতিক হারে অস্বাভাবিক জীব কোষের সংখ্যাও বেশি হবে। আর জীব কোষ যত বেশি হবে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশিই হবে। স্তন, জরায়ু ও প্রস্টেট বা মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থির ক্যান্সার সংক্রান্ত গবেষণা থেকে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে। লম্বা মানুষদের মধ্যেই এসব ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
গ্রোথ হরমোনও ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে ভুমিকা রাখে। গবেষণায় দেখায় গেছে দেহে গ্রোথ হরমোনের মাত্রা যত কম থাকবে রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তত কম হবে।
৩. হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস
এ ক্ষেত্রে বেঁটে লোকদের ঝুঁকি বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের দেহের উচ্চতা যত বেশি তাদের রক্তের শিরা উপশিরাগুলো ততবেশি প্রসারিত এবং শক্তসমর্থ হয়ে থাকে। অথবা সম্ভবত দীর্ঘদেহীরা শিশু বয়সে বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছেন বা এমন পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন যেখানে রোগের সংক্রমণ কম হতো। তবে এটা নিশ্চত নয় যে লম্বা হওয়ার ফলেই নাকি লম্বা হওয়ার পেছনে ভুমিকা পালনকারী কোনো উপাদান লোককে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে রক্ষা করে।
৪. ফুসফুস প্রতিস্থাপন
বেঁটে মানুষদের দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন একটু ঝামেলাপুর্ণই হয়, অন্তত ফুসফুস প্রতিস্থাপনের বেলায়তো বটেই। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বা তারচেয়েও কম তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া কঠিন হয়। কারণ তাদের আকৃতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সহজে পাওয়া যায় না। এতে হাসপাতালের বিছানাতেই তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫. জখম
লম্বা মানুষদের আঘাত পাওয়ার ঝুঁকিই শুধু বেশি নয় বরং তাদের জখমগুলোও বেঁটে মানুষদের চেয়ে একটু বেশিই ক্ষতিকর হয়। লম্বা মানুষেরা পড়ে গেলে বা আঘাত পেলে তাদের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বৃদ্ধ বয়সে লম্বা মানুষদের মধ্যেই বেশি পশ্চাদ্দেশের ফাটল দেখা যায়।
লম্বা মানুষদের স্নায়ুতন্তু দীর্ঘ হওয়ার কারণে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাতেও দেরি করেন। কারণ তাদের স্নায়ুর স্পন্দনগুলোকে দীর্ঘ স্নায়ুতন্তু পাড়ি দিয়েই আসতে হয়। পেশাদার অ্যাথলেটদের মধ্যে যারা দীর্ঘদেহী হন তারা ইনজুরিতে পড়লে সেরে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। তুলনায় বেঁটে অ্যাথলেটরা দ্রুতই সুস্থ হন।
৬. রক্ত জমাট
লম্বা মানুষেরা প্লেন বা অন্য কোনো যানবাহনে চড়ে দীর্ঘ সফর করলে রক্ত জমাটবদ্ধতায় আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ যানবাহনের সিটে বসে লম্বা মানুষেরা সহজে পা নড়া-চড়া করতে পারেন না। এই জমাটবদ্ধ রক্ত ফুসফুসে পৌঁছে এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
৭. মেরুদণ্ড, ঘাড় ও পিঠের সমস্যা
বেশিরভাগ কর্মস্থলই গড়পড়তা উচ্চতার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়। বেঁটে মানুষ, লম্বা মানুষ- সকলেই একই আকারের ডেস্ক বা কিউবিকলে বসে কাজ করেন। আর এতে সব ধরণের পিঠ ও ঘাড়ের সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষকরে লম্বা মানুষদেরেই ঝুঁকি বেশি। লম্বা মানুষেরা স্কলায়োসিস জাতীয় মেরুদন্ডের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি।