নিয়মিত লেবু জল না খেলে কি হতে পারে জানেন?
কলকাতা টাইমস :
সমীক্ষা বলে আমাদের দেশের জনগন সারা দিনে যে পরিমাণে চা-কফি খায়, তার তুলনায় জল খায় একেবারে নাম মাত্র। তাই তো জলের অভাবে শরীর শুকিয়ে গিয়ে যেসব রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে সেগুলির স্বর্গরাজ্য হল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। তাই তো এই প্রবন্ধটিতে এমন একট পানীয়র সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা একদিকে যেমন শরীরের জলের অভাব মেটাবে, তেমনি একাধিক রোগকে দূর রাখতেও সাহায্য করবে।
এই লেখায় যে পানীয়টির প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে সেটি বানাতে প্রয়োজন পরবে শুধু এক গ্লাস জল এবং একটা অর্ধেক লেবুর। একেবারে ঠিক শুনেছিন, এই দুটি উপাদানের সহযোগে বানানো সরবাত রাত দিন খেলেই দেখবেন ডাক্তারের চেম্বারের ঠিকানা আপনি একেবারে ভুল গেছেন। কেন এমনটা বলছি, তাই ভাবছেন তো? একবার চোখ রাখুন বাকি প্রবন্ধে, তাহলেই সব প্রশ্নর উত্তর পেয়ে যাবেন। একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত লেবু জল খেলে শরীরের নানা উপকারে লাগে। যেমন…
১. টিবি রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে: সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে টিবি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে লেবুর মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যদি খাওয়া যায়, তাহলে ওষুধের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।
২. ওজন কমায়: নিয়মিত লেবু জল খেলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্তি মেদ ঝরে যেতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ লেবুর অন্দরে উপস্থিত পেকটিন নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে কম মাত্রায় খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কম মাত্রায় ক্যালরির প্রবেশ ঘটে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।
৩. শ্বাস কষ্ট দূর করে: যারা অ্যাস্থেমা বা কোনও ধরনের রেসপিরেটরি প্রবলেমে ভুগছেন তারা যত শীঘ্র সম্ভব রোজের ডায়েটে লেবুর জলকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন কেমন ফল পান! আসলে এই পানীয়টি শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত একাধির জটিলতাকে কমিয়ে ফেলতে দারুন কাজে আসে।
৪. উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: লেবু জলে থাকে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এমন রোগে যারা বহু দিন ধরে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল লেবু জল খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন দারুন ফল পাবেন। তবে এমনটা করার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন।
৫. পেটের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: যারা বদ হজম, কনস্টিপেশন, বারংবার পেট খারাপ সহ নানাবিধ পেটের রোগে ভুগে তাকেন তারা প্রতিদিন সকালে গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে স্টামাক অ্যাসিডের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে শুরু করবে। ফলে রোগের প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনও বেরিয়ে যাবে।
৬. স্ট্রেস এবং অবসাদ থেকে মুক্তি মেলে: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত লেবুর জল খেলে স্ট্রেস একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে অবসাদের প্রকোপও কমে। আসলে লেবু জলে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এমন সব সমস্যা নিমেষে কমে যেতে শুরু করে।
৭. মুখ গহ্বরের নানা রোগ সেরে যায়: মুখ থেকে খুব দুর্গন্ধ বেরয়? এদিকে নানা কিছু করেও সুরাহা মিলছে না? তাহলে আজ থেকেই লেবু জল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বদ গন্ধ একেবারে কমে যাবে। শুধু তাই নয়, মাড়ি থেকে রক্ত পাত এবং দাঁতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা হলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
৮. ত্বকের সৌন্দর্য় বৃদ্ধি পায়: হাজারো বিউটি প্রডাক্ট যা করে উঠতে পারেনি, তা লেবুর জল নিমেষে করে ফলতে পারে। আসলে এই পানীয়তে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে ত্বকের বয়স কমানোর পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস এবং বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, গরমকালে ত্বককে ঠান্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে লেবুর জল দিয়ে বারে বারে মুখটা ধুতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।
৯. সংক্রমণের প্রকোপ কমায়: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ। তাই তো লেবু জল যে কোনও ধরনের সংক্রমণ, বিশেষত গলার সংক্রমণ কমাতে দারুনভাবে সাহায্য় করে থাকে। এক্ষেত্রে লেবু জলে দিয়ে গার্গেল করলেই উপকার পাওয়া যায়।
১০. এনার্জির ঘাটতি দূর করে: ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি না খেয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস করে লেবুর জল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে দেখবেন শরীর চনমনে হয়ে উটতে সময়ই লাগবে না। আসলে লেবুর অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে সকাল সকাল শরীর এবং মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না।