সামান্য ফোঁড়া বা ফুস্কুরি ভেবেছেন কি শেষ
কলকাতা টাইমস :
মাঝে মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ফোঁড়া বা ফুস্কুরি গজিয়ে ওঠে? ওষুধ খেয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না? তাহলে দেরি না করে চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। রোগটির সঙ্গে সাধারণ চর্মজাত রোগকে গুলিয়ে ফেলবেন না। সময় বিশেষে এটা মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
চিকিত্সার ভাষায় এর একটা খটোমটো নাম রয়েছে, মেথিসিলিন রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরেয়াস। ছোট করে বলতে হলে MRSA। ডাক্তাররা একে সুপারবাগ-ও বলছেন। সাধারণত ত্বক, ফুসফুস এবং শরীরে অন্যান্য কিছু অংশে এরা থাকে। সব থেকে খারাপ ব্যাপার হল, কোনও অ্যান্টিবায়োটিক এই জীবানুর ওপর কোনও কাজ করে না। সাধারণ এদের সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রাণ সংশয় হতে পারে। প্রতি বছর এই সংক্রমণের শিকার হন কয়েক লক্ষ মানুষ। তার মধ্যে ৭২ হাজার জন ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ধীরে ধীরে এই রোগ ভয়ানক হয়ে উঠছে।
দেখতে সাধারণ ফোঁড়ার সঙ্গে এর বিশেষ কোনও তফাত নেই। অনেক সময় অনেকটা জায়গা নিয়ে হতে পারে এই সংক্রমণ। অনেকে মাকড়সার কামড়ের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলেন। হঠাত্ শরীরে কোনো অংশ ফুলে উঠতে পারে। গোটা জায়গাটি লাল হয় যন্ত্রণা হতে পারে। একে সেলুলাইটিস বলা হয়। এর পেছনেও থাকে এই MRSA জীবাণু। এই সংক্রমণের কোনো বিশেষ ঋতু নেই। বছরের যে কোনও সময় হতে পারে। যন্ত্রণাদায়ক বড় বা ছোট ফোঁড়ার মতো দেখতে ভেতরে পুঁজ জমে থাকে। অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ মতো আলাদা করে পুঁজ বার করতে হতে পারে।
এ রোগ ছড়ায় কী করে? চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, ১০০ জনের মধ্যে ২ জনের দেহে এই জীবাণু বাস করে। ছোঁয়া থেকেই এই জীবাণু ছড়ায়। রেজার, তোয়ালে, খেলার সামগ্রী ইত্যাদি থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। যাঁরা সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, বয়স্ক মানুষ এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এমন ব্যক্তিদের এই সংক্রমণ চট করে হতে পারে। তবে সুস্থ-সবল ব্যক্তিরাও এর কবল থেকে বাঁচতে পারেন না। জিম, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পোষ্য থেকেও এই রোগ আমদানি হতে পারে। এমনকী সমুদ্রসৈকতের বালি থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে।
বাঁচবেন কী ভাবে? প্রথমেই চিকিত্সকের পরামর্শমতো পরীক্ষা করে দেখে নিন আপনিও এই সংক্রমণের শিকার কিনা। সাধারণ ভাবে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক এই রোগে কাজ করে না। ফলে বিশেষ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেই সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। অনেক সময় এর চিকিত্সায় ইনট্রাভেনাস পদ্ধতিতে ভ্যাঙ্কোমাইসিন প্রয়োগ করতে হয়। যদিও বর্তমান চিকিত্সা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে কিছু নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভবপর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা।
এই সংক্রমণ থেকে বাঁচার সব থেকে ভালো উপায়, বাইরে থেকে এসে বা কোথায় বাইরে খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন। দরকার হলে সঙ্গে স্যানিটাইজার রাখুন। অন্য কারও সঙ্গে তোয়ালে, পোশাক বা রেজার শেয়ার করলে তা ভালো করে ধুয়ে তার পর ব্যবহার করুন। একই কথা সমুদ্র সৈকতে পরা পোশাকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।