এই বিষ বাষ্পেই ক্ষয়ে যায় সম্পর্ক
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
দাম্পত্য হোক কিংবা প্রণয়, অথবা হতে পারে নিছক বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও- ‘সন্দেহ’ নামক মানবিক আবেগটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের মানবীয় সম্পর্কগুলোর সাথে। সন্দেহ সেই আবেগ গুলোর মাঝে অন্যতম, যা কিনা ভীষণভাবে দায়ী সম্পর্ক গুলোর ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে। একটি সুন্দর আবেগের বন্ধনকে মুহূর্তের মাঝে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে পারে এই সন্দেহ, দাম্পত্যে অশান্তি ডেকে আনতে পারে অবলীলায়, প্রণয়কে পরিহাসেও বদলে দিতে পারে অনায়াসে। কিন্তু কেন? কি সেই কারণ যার প্রভাবে সন্দেহের দখলদারিত্ব আমাদের সম্পর্ক গুলোর ওপরে? কেন প্রেম- দাম্পত্য- বন্ধুত্বগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে সম্পর্কের বিষ বাষ্পে? আর কিসেই বা মিলবে প্রতিকার? আসুন জেনে নেই একটু…
সন্দেহের সাতকাহনআজকালের ব্যস্ত সামাজিকতার জীবনে অভাব নেই সন্দেহ উদ্রেক করবার মতন কারণের। দাম্পত্য আর প্রণয়ে সম্পর্কের একশ একটা কারণ তো বহু আগে থেকেই ছিল, আজকাল সেগুলোর সাথে বাড়তি যোগ হয়েছে মোবাইল ফোন, ফেসবুক আরও কত কি! এসবের কারণে যেমন বাড়ছে আমাদের পরিচিতের পরিধি, তেমনি বাড়ছে জীবন সঙ্গী বা ভালবাসার মানুষটির সাথে সন্দেহ তৈরি হবার মতন কারণ-ও। একটা জিনিস মনে রাখবেন, সন্দেহ করতে চাইলে কারণের কোনও অভাব হয়না। কারো কারো ক্ষেত্রে সন্দেহটা আসে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার ভয় থেকে, কারো মনে জন্ম নেয় প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যের অভাববোধ থেকে, আবার কেউ বোকার মতন তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কথায় সন্দেহ করে বসেন একান্ত আপন মানুষটিকে। কারণ যাই হোক না কেন, দিন শেষে ফলাফল কিন্তু সেই একি। ঝগড়া- অশান্তি- সম্পর্ক ক্ষয় আর পরিশেষে ভাঙ্গন। ভীষণ প্রিয় সম্পর্ক গুলো হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে, আপন মুখ গুলো সরে যাচ্ছে দূরে। প্রিয় মানুষটি পর হয়ে যাবার ভয় থেকে যে সন্দেহের সূত্রপাত, সেই সন্দেহটাই একসময় দূরে নিয়ে যাচ্ছে আপন মানুষটিকে।
তাহলে বলুন, লাভটা কি হলো সন্দেহ করে? একটা জিনিশ মনে রাখবেন, প্রেমিক/প্রেমিকা বা জীবন সঙ্গী/ সঙ্গিনী মানুষটি আপনার সম্পত্তি নয় যে আপনার কথায় উঠবে বসবে। সে আপনার জীবনের সম্পদ, আর সেই কারণেই তার সাথে যোগসূত্রটিকে লালন-পালন করার দায়িত্বটা আপনারও। তার আছে সম্পূর্ণ পৃথক একটি ব্যক্তিসত্ত্বা, পৃথক ভাবনা, পৃথক একটি জীবন। হ্যাঁ, যদি সে আপনার স্বামী বা স্ত্রী হয়ে থাকেন তবুও তার আছে একদমই আলাদা একটি জীবন। আছে আপন কিছু সম্পর্ক-বন্ধুত্ব, কিছু ভালোমন্দ লাগা, একান্ত নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা। নিজের প্রিয় মানুষটিকে ভালবাসার পাশাপাশি সম্মান করতে শিখুন, মূল্য দিতে শিখুন তার চাওয়া-পাওয়াকে। দেখবেন কমে আসবে সন্দেহের প্রকোপ অনেকটাই।
অবশ্যই মনে রাখবেন যে, পারস্পরিক সম্মানটা ঠিক না থাকলে সন্দেহ বাড়বে আর বাড়তেই থাকবে সম্পর্কে। হ্যাঁ, বিশ্বাসঘাতকতা আছেই। এবং থাকবে। সত্যটা এটাই যে বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার ভয়টা দিনশেষে সকল সম্পর্কেই থেকে যায়। আর সেই ভয় আর ঈর্ষা বোধ থেকেই জন্ম নেয় সকল প্রকার সন্দেহ। কিন্তু মনে রাখবেন, সন্দেহের ওপর প্রান্তেই কিন্তু থাকে বিশ্বাস। যে বিশ্বাস ধরে রাখে একটি সম্পর্ককে, সুন্দর করে তোলে আবেগের বিনিময়। কারো যদি বিশ্বাস ভঙ্গ করার ইচ্ছা থাকে, আপনি শত সন্দেহ করেও তাকে ধরে রাখতে পারবেন না। বিশ্বাস সে ভাঙবেই ভাঙবে, সন্দেহে লাভ হবে না কিছুই। কিন্তু একটা সুন্দর সম্পর্ক যখন আক্রান্ত হবে সন্দেহের কুৎসিত ছায়ায়, তখন অশান্তি-দূরত্ব-ভাঙ্গন কিন্তু নিশ্চিত। পাশে থাকুক প্রিয়জন, কাছে থাকুক। মানবীয় সম্পর্কেরা অটুট থাকুক নিজ নিজ সৌন্দর্যে। একটু চর্চা করুন শুদ্ধ আবেগের, নিশ্চিত রূপেই সন্দেহের বিষ বাষ্প দূরে থাকবে আপনার একান্ত নিজস্ব ভুবনটি থেকে।