September 29, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

পুড়ে ভস্ম হলেও আজও এখানে হানা দেয় সুন্দরীরা

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

লাউদ্দিন খিলজির এক অচরিতার্থ কামনার আগুনে যেমন পুড়েছিল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ঐতিহাসিক চিতোরগড়, তেমনই গড়ের নারীরাও! কাহিনি বলে, রানি পদ্মিনীর সঙ্গে বারো হাজার নারী বরণ করে নিয়েছিলেন আগুনের দুঃসহ তাপ। জহরব্রত করে বিধর্মী শত্রুর লালসা থেকে আত্মসম্মান রক্ষা করেছিলেন তারা। কিন্তু, তাদের আত্মা গড় ছেড়ে কোথাও যায়নি! কোথাও যাননি রানি পদ্মিনীও!

শুনতে অবাক লাগলেও চিতোরগড় বরাবরই রহস্যে মোড়া! মানুষে যেখানে যেতে পারে না, সেখান থেকে বার বার অনেকেই ঘোরাফেরা করেছেন চিতোরগড়ে। তাদের কেউ বা দেবী, কেউ বা অভিশপ্ত প্রেতিনী!

সেই আবির্ভাব প্রথম ঘটেছিল যুদ্ধের সময়ে। আলাউদ্দিন খিলজি পণ করেই এসেছেন, চিতোরকে জনশূন্য করে পদ্মিনীকে তিনি বন্দিনী করে রাখবেন হারেমে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তখন বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে গড়। এমন সময়েই ঘটে সেই অলৌকিক কাণ্ড!

‘হঠাৎ পায়ের তলায় মেঝের পাথরগুলো যেন কেঁপে উঠল; তারপর মহারানা অনেকখানি ফুলের গন্ধ আর অনেক নূপূরের ঝিন-ঝিন শব্দ পেলেন। কারা যেন অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মহারানা বলে উঠলেন, কে তোরা? কি চাস? চারিদিকে-দেওয়ালের ভিতর থেকে ছাদের উপর থেকে, পায়ের নিচে থেকে শব্দ উঠল- ম্যায় ভুখী  হুঁ!’

রাণা লক্ষ্মণসিংহকে যিনি দেখা দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন চিতোরের কুলদেবী উবরদেবী! তবে, পদ্মিনীর স্বামী খোদ রাণা ভীমসিংহর মন থেকে সন্দেহ যায়নি। রাজপুত বীরেরা যখন যুদ্ধে যাচ্ছেন, তখন আবার দেখা দিয়েছিল সেই মূর্তি। ভীমসিংহের মনে হয়েছিল, তিনি দেবী না পদ্মিনী?

রাণার যা-ই মনে হোক, যুদ্ধের খবর কিন্তু খারাপই আসতে থাকে গড়ে। নিজের জলমহলে বসে শোনেন পদ্মিনী, কেবল তাকে রক্ষার জন্য হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছে রাজপুতরা! অবশেষে যখন তিনি বুঝতে পারেন, আর আশা নেই, তখন তৈরি হন।

‘চিতোরের মহাশ্মশানের মধ্যস্থলে চিতোরেশ্বরীর মন্দিরে বারো-হাজার রাজপুত সুন্দরীর জহর-ব্রত আরম্ভ হল।… বারো হাজার রাজপুতের মেয়ে সেই অগ্নিকুণ্ডের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগল- লাজ হরণ! তাপবারণ! হঠাৎ একসময় মহা কল্লোলে চারিদিকে পরিপূর্ণ করে হাজার-হাজার আগুনের শিখা মহা আনন্দে সেই সুড়ঙ্গের মুখে ছুটে এলো। প্রচণ্ড আলোয় রাত্রির অন্ধকার টলমল করে উঠল। বারো হাজার রাজপুতানীর সঙ্গে রানী পদ্মিনী অগ্নি-কুণ্ডে ঝাঁপ দিলেন- চিতোরের সমস্ত ঘরের সোনামুখ, মিষ্টি কথা আর মধুর হাসি নিয়ে এক-নিমেষে চিতার আগুনে ছাই হয়ে গেল।’

কিন্তু, কোথাও গেল না! তারা অশরীরে, সবার অলক্ষ্যে থেকে গেল চিতোরেই! আজও রাত নামলে চিতোরগড়ে সেই বারো হাজার রমণীর বিলাপের শব্দ শোনা যায়। তারা কেঁদে কেঁদে অপমানের প্রতিকার চান!

বিশ্বাস না হলেও অনেকে চিতোরগড়ে দেখা পেয়েছেন রানি পদ্মিনীরও! রাজকীয় পোশাকে, অপূর্ব অলঙ্কারে শোভিতা এক নারী মাঝে মাঝেই দেখা দেন। ঠিক যেমনটা দেখেছিলেন রাণা ভীমসিংহ আর লক্ষ্মণসিংহ। কিন্তু, বর্তমান সময়ে যারা দেখেছেন, চোখে পড়েছে সেই রমণীর মুখ আগুনে ঝলসানো! সেই রূপ সহ্য করা যায় না! পদ্মিনীর এই মর্মান্তিক দগ্ধ রূপ দেখেই অনেকে ভয়ে প্রাণত্যাগ করেছেন।

তাই রাত নামলে কেউ চিতোরগড়ে যাওয়ার স্পর্ধা দেখান না! যে রূপ একসময়ে বিনাশ ডেকে এনেছিল চিতোরের, সেই রূপের দগ্ধাবশেষেই চিতোরকে অনুপ্রবেশকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে চান পদ্মিনী! এমনটাই কাহিনি বলে! তার প্রতি সম্মানে আমাদেরও তাই সেখানে রাত নামলে না যাওয়াই উচিত হবে!

Related Posts

Leave a Reply