আজও রহস্যময় প্রাচীন এই স্থাপত্যের সৃষ্টির কারণ
কলকাতা টাইমস :
কালের আবর্তে সবই হারিয়ে যায়। মগধ ও সিন্ধু’র মতো ভারতের প্রাচীন সভ্যতা যেমন হারিয়ে গেছে, তেমনি মায়া কিংবা ব্যাবিলনিয়ার মতো প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতাও আজ ইতিহাস। তবে সেসব সভ্যতার টিকে থাকা ভগ্নাবশেষ আজও বিস্মিত করে হালের আধুনিক সভ্যতাকে। এযুগের গবেষকেরা নিজেদের সবচেয়ে উন্নত ও বুদ্ধিমান দাবি করলেও হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার বিজ্ঞান তাদের কাছে এক ব্যাখ্যাহীন রহস্য।
গোসেক চক্র : জার্মানির গোসেক শহরের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক রহস্যময় স্থাপনা। প্রাচীন এই স্থাপনা সময়ের নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়ে টিকে থাকলেও এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আর্কষণ হয় ১৯৯১ সালে। গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারের স্টোনহেঞ্জের মতো এই স্থাপনাটিও যিশুর জন্মের প্রায় ৪ হাজার ৯শ’ বছর আগের তৈরি। কিন্তু এতো প্রাচীন স্থাপনাটি কারা নির্মাণ করেছিল? এই বিষয়ে অন্ধকারে থাকা বিজ্ঞানীদের ধারণা, সম্ভবত ইউরোপে যারা প্রথম বসতি গড়ে তারাই ধর্মীয় আচার পালনে এমন অদ্ভুত স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিল।
আরও পড়ুন : একটা বাটির দাম আড়াইশ’ কোটি টাকা!
গবেষকদের ধারণা ছিল, সম্ভবত ঘড়ির কাজ আর ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল এই স্থাপনাটি। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী পরে স্বীকার করেন, এই স্থাপনাটির সঙ্গে মহাজাগতিক সম্পর্ক রয়েছে। সম্ভবত মহাকাশ পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে এটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু স্টোনহেঞ্জের মতো এই প্রাচীন স্থাপনাও কেন প্রাচীন সভ্যতার মানুষ ব্যবহার করতো তা আজও রহস্যই থেকে গেছে।
গোবেকলি টেপে : মেসোপটনিয়ার আদি শহরগুলোর চেয়ে ৫ হাজার বছর পুরনো, ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের চেয়ে ৭ হাজার বছর পুরনো, মিশরের পিরামিডের চেয়ে ৭ হাজার বছর পুরানো যে স্থাপত্যকে ঘিরে এখনও রহস্য রয়ে গেছে সেটি গোবেকলি টেপে। গবেষকদের মতে, এটি সম্ভবত মানুষের তৈরি প্রথম কোনো স্থাপত্য। সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণে অবস্থিত এই স্থাপত্য নিখুঁতভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করা। এই স্থাপত্যও উপাসনার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে গবেষকদের ধারণা। কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষ এতো নিখুঁত করে কিভাবে স্থাপত্যটি নির্মাণ করেছিল তা যেমন রহস্য, তার চেয়ে বড় রহস্য হচ্ছে এটি আসলে কি কাজে ব্যবহার করা হতো।
পুমা পাঙ্কু : বলিভিয়ার টিউয়ানাকু এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন এই স্থাপনাটি সম্পর্কে এলিয়েন বিশ্বাসীরা সবচেয়ে বেশি কথা বলে থাকে। এটি নির্মাণ শৈলী ও কৌশল নিয়ে হালের বিজ্ঞানীরা এখনও রহস্যে। তার চেয়ে বড় রহস্য হচ্ছে এই স্থাপত্যটি কি কাজে ব্যবহার করা হতো। অন্যান্য প্রাচীন স্থাপত্যের মতো এটি নিয়েও গবেষকদের দাবি হচ্ছে, তিউয়ানাকু সম্রাটদের শাসনামলে তৈরি এই স্থাপনা উপাসনার কাজেই ব্যবহার হতো।
উঁচু টিলার ওপরে স্থাপিত পাথরের তৈরি এই স্থাপনাটি ৩০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি কোনো একসময় নির্মাণ করা হয় বলে গবেষকদের ধারণা। স্থাপত্যবিদেরা স্বীকারও করেছেন, এই পাথরগুলো দিয়ে স্থাপনাটি আবার তৈরি করা তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
গবেষকদের ধারণা, অত্যন্ত নিখুঁত এই স্থাপনাটি কোনোভাবেই তিউয়ানাকু সভ্যতার লোকেরা তৈরি করেনি। সাগর পাড়ি দিয়ে আসা কোনো জাতি হয়তো স্থাপনাটি তৈরি করে দিয়ে গেছে। তবে এলিয়েন গবেষকদের দাবি, এমন স্থাপত্যের পেছনে রয়েছে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান মানুষ।