শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও যখন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, কারণটা যখন ….

কলকাতা টাইমস :
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আবিষ্কারের পর তা সারা বিশ্বের বহু মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু এ অ্যান্টিবায়োটিকই যখন আর কাজ করে না তখন চিকিৎসকেরা আবার অসহায় হয়ে পড়েন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ইকনোমিস্ট।
গবেষকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ না করার পেছনে ওষুধের অযাচিত ব্যবহার দায়ী। অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করেন। সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা হলে তা ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ না করার বিষয়টি ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বর্তমানে বছরে প্রায় সাত লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে এ কারণে, যাদের অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজেই আসছে না। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ২০৫০ সালে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বছরে এক কোটিতে দাঁড়াবে।
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পেছনে ওষুধটির অতিরিক্ত ব্যবহার ও ভুল ব্যবহারকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধটির অযাচিত ব্যবহারের কারণেই এই মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ না হলে রোগীদের উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। আর যত কড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তত বেশি হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকেও কোনো কাজ হয় না। এ অবস্থাটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, যা রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে।
অনেকেই সর্দিকাশি বা সামান্য শারীরিক সমস্যা হলেই কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট কিনে খেয়ে নেন। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন না করলে জীবাণু ধ্বংস না হয়ে উল্টো সেই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। তখন পুরো কোর্স ওষুধ খেলেও সেই জীবাণু ধ্বংস হয় না। আবার অনেক চিকিৎসকও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন না। এতে বাড়তি অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এ পরিস্থিতিতে শুধু যে মানুষের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক দায়ী, তা নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন খামারে হাস-মুরগী কিংবা গরু-ছাগলকে প্রয়োগ করা অ্যান্টিবায়োটিকও ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরেও চলে আসছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব। রোগজীবাণু গড়ে তুলছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে এসব রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও কোনো কাজ হবে না। শুধু তা-ই নয়, মানবশরীরে অপরিমিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের ফলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে মানুষ বেশি করে রোগাক্রান্ত হচ্ছে, আর শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বের নানা দেশে এখন অ্যান্টিবায়োটিকের এ ক্ষতিকর দিকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে উঠছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের নানা দেশে খামারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া নীতিনির্ধারকরা কোন উপায়ে এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করছেন। গবেষকরা আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনের যেমন চেষ্টা করছেন তেমন অ্যান্টিবায়োটিক বাড়তি প্রয়োগ কিভাবে বন্ধ করা যায় তারও চেষ্টা চলছে