November 12, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ধর্ম সফর

এখানে এখনো একজনের অপরাধের শাস্তি ভাগ করে নিতে হয় সবাইকে

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস

এখানে একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এখনো শত বছরের পুরানো আইনকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। এখনো ওই গ্রামে কেউ অপরাধ করে পালিয়ে গেলে তার দায় নিতে হয় গোটা কমিউনিটিকে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখার কয়েক মাইল দূরেই প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান। কয়েক বছর আগেও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্ত অঞ্চলটিকে তাদের যোগাযোগ ও চোরাচালানের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করতো।

গত কয়েক দশক ধরে দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায় বাস করে আসছে একটি উপজাতি গোষ্ঠী। যাদের সঙ্গে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের বলতে গেলে কোনো যোগাযোগই নেই। তবে ইদানিং তাদেরকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে সরকার।

আর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পাশের শহর জামরুদের সাধারণ মানুষ। তারা জানান, এতো দিন একজনের অপরাধের জন্য পুরো এলাকার মানুষকে জেলে যেতে হতো। এখন আর তা হবে না।

একশ বছরের বেশি সময় ধরে চলা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনানুযায়ী, সীমান্তে কোনো অপরাধ হলেই তার বিচারের দায় ভার নেবে সেই জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব আইনি পরিষদ।এই নৃগোষ্ঠীর আইনি সংস্থাকে বলা হয় জিরগা। যার সদস্যরা হলেন গ্রামের অভিজ্ঞ প্রবীণরা।

তারা মূলত অপরাধের তদন্ত করেন এবং কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিচারের রায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিযুক্ত রাজনৈতিক এজেন্টের মাধ্যমে ঘোষণা করেন।

ব্রিটিশ শাসকদের এমন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল যেন, প্রতিটি এলাকায় তাদের প্রভাব বজায় থাকে। তবে এই ব্রিটিশ আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত দিকটি হল, কেউ যদি অপরাধ করে পালিয়ে যায় তবে তার আত্মীয় স্বজন বা কমিউনিটির সদস্যদের আটক করা হতো।

ধারণা ছিল, এতে জড়িত ব্যক্তি চাপে পড়ে ধরা দেবে। এমন বিধানের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো দোষ না করেই একজনের জন্য শাস্তি পেত এক দল মানুষ।

জামরুদ শহরের বাইরে একটি ছোট গ্রামের বাসিন্দা নিরাম গুল। তিনি বিবিসির সাংবাদিকদের দেখাচ্ছিলেন যে ৪ বছর আগে সেনাবাহিনীর লোকেরা তার বাড়ির একটা অংশ ধ্বংস করে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘এক রাতে তালেবান জঙ্গিরা, সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালালে আট জন মারা যান। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর লোকেরা আমাদের গ্রামে আসে আর কোনো কারণ ছাড়াই আমার বাড়িটা ভেঙে দিয়ে যায়।’

‘তারা বলে যে ওই দিনের ঘটনার জন্য নাকি আমরা সবাই দায়ী। এই এলাকায় যা কিছুই হোক তার দায় নাকি আমাদেরই নিতে হবে’-বলেন নিরাম গুল।

নিরাম গুলের মতো এই উপজাতির অন্য সদস্যরা এই ব্রিটিশ সীমান্ত অপরাধ আইনকে কালো আইন বলে আখ্যা দিয়েছে।গ্রামের প্রবীণ সদস্য মালিক ইস্রাউল আফ্রিদি জামরুদ শহরের স্থানীয় বিচার পরিষদ বা জিরগার প্রতিষ্ঠাতা।তিনিও এই ব্রিটিশ আইনের নিন্দা জানান। তবে সেটা পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও আপত্তি আছে তার।

তিনি মনে করেন, ব্রিটিশরা এই ধরনের আইন করার আগে স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ভুল করেছিল।

তবে তিনি বলেন, ‘আমি এটা মানি যে, সীমান্ত অপরাধ আইনে কিছু সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। তবে সেটা পুরোপুরি তুলে দিয়ে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হবে সেটাও চাই না।’

পাকিস্তানে গত দুই বছরের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আদালত, আইন, বিচারব্যবস্থা সেইসঙ্গে পুলিশদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে এতে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বরং আগের মতোই অবিকশিত থেকে গেছে দেশটির এই প্রান্তিক অঞ্চলটি। আইনের সংস্কারের মাধ্যমে হয়তো পরিবর্তন আনা সম্ভব।

না হলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাষ্যমতে ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটির গায়ে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক স্থানের’ দাগ পড়ে যাবে।

Related Posts

Leave a Reply