November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular সফর

বাংলায় ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের প্রমান এই ‘নীল সাদা’ কুয়ো

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

খিদিরপুর ব্রিজ থেকে হেস্টিংসের দিকে নামার সময়ে বাঁদিকে একটি কুয়ো অনেকেরই চোখে পড়়ে। ১৫ ফুট মতো গভীর। স্থানীয়ভাবে এই কুয়োটি ‘ফাঁসি কুয়ো’ বলেই পরিচিত। কিন্তু কেন এই কুয়োর এমননামকরণ? তা অবশ্য অনেকেই জানে না। কিন্তু এই পরিত্যক্ত, সাধারণ একটি কুয়োর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস এবং এক রোমাঞ্চকর কাহিনি। বলা ভাল, ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন ভারতে প্রথম ফাঁসির সাক্ষী এই কুয়োটি।

পরিত্যক্ত কুয়োটির চারপাশে এখন ময়লা, আবর্জনার স্তূপ। দেখলেই বোঝা যায় কুয়োটির কোনও রক্ষণাবেক্ষণ নেই। আর পাঁচটা দেওয়াল, রাস্তার রেলিংয়ের মতোই পরিত্যক্ত কুয়োটির গায়েও নীল-সাদা রংয়ের প্রলেপ পড়েছে। ঐতিহাসিক শঙ্করকুমার নাথের দাবি, ১৭১৪ সালে বীরভূমের ভদ্রপুরে জন্মেছিলেন নন্দকুমার। দরিদ্রদের মধ্যে নন্দকুমার দারুন জনপ্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ নন্দকুমারকে মহারাজা উপাধি দিয়েছিলেন।

১৭৬৪ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসের জায়গায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে বর্ধমান, নদিয়া এবং হুগলির কর আদায়ের দায়িত্ব পান নন্দকুমার। তাঁকে সরিয়ে এক বাঙালিকে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়ায় নন্দকুমারের উপরে ক্ষিপ্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

১৭৭৩ সালে হেস্টিংস ফের বাংলার গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। নন্দকুমারকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। মিথ্যে প্রতারণার মামলায় ফাঁসানো হয় নন্দকুমারকে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন এলিজা ইম্পে, তিনি আবার ওয়ারেন হেস্টিংসের বাল্যবন্ধু ছিলেন। তিনি বিচার করে নন্দকুমারকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ফাঁসির সাজা হয় এই বাঙালি রাজার। নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য হেস্টিংস মোড়ে (তৎকালীন কুলি বাজারে) খোডা হয় কুয়ো। ১৭৭৫ সালের ৫ অগস্ট জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল মহারাজা নন্দকুমারকে। ব্রিটিশ শাসনকালে এটিই ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ফাঁসি ছিল। কুয়ো খোড়া হয়েছিল নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য। এই হত্যাকে তখন আইনি খুনের আখ্যা দেওয়া হয়। যদিও, পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয় নন্দকুমার নির্দোষ ছিলেন। যা নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, এটি একটি ‘আইনি খুন।’

যে ফাঁসি কুয়োর সঙ্গে এমন ইতিহাস জড়িয়ে আছে, সেটিই আজ উপেক্ষিত। এমনকী কলকাতা পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলরও এই কুয়োটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবহিত নন। স্থানীয় কাউন্সিলর বিলকিশ বেগমকে বিষয়টি নিয়ে এবেলা.ইন-এর পক্ষ থেকে যোগাোযোগ করা হয়েছিল। ওই কুয়োটির যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, তা জানতেনই না তিনি। রাজা নন্দকুমার বা তাঁর ফাঁসি নিয়েও তিনি ওয়াকিবহল ছিলেন না। আপাতত তিনি কলকাতার বাইরে রয়েছেন। কলকাতায় ফিরেই তিনি ওই এলাকায় গিয়ে ‘ফাঁসি কুয়ো’-র বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

Related Posts

Leave a Reply