আপনার ক্ষিদে কমে যাওয়ার কারণগুলি দায়ি হতে পারে….
কিছু দিন ধরে একেবারে ক্ষিদে পায় না। কেমন যেন পেটটা ভার ভার লাগে। এদিকে রাতেও সেভাবে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া হয় না। তাহলে এমনটা কেন হচ্ছে? নানা কারণে এমন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন… চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে। তবে তার আগে একথা জেনে নেওয়া উচিত যে খিদে কমে যাওয়া মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। তাই এমনটা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। না হলে কিন্তু জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের শরীরকে সচল রাখতে জ্বালানির প্রয়োজন পরে। আর এই জ্বালানির যোগান দেয় খাবার। তাই তো ক্ষিদে কমে গেলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে হজম ক্ষমতার কোনও গোলযোগ দেখা দিযেছে। সেই সঙ্গে হজম সম্পর্কিত শরীরের একাধিক অঙ্গ হয়তো ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। তাই এমন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এবার তাহলে বুঝলেন তো ক্ষিদে কমে যাওয়াকে কেন হলকা ভাবে নিতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।
কেন কমে যায় ক্ষিদে? কী কী কারণ এক্ষেত্রে দায়ি থাকে? চলুন উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালানো যাক।
কারণ ১:
আপনার কি তলপেটে মাঝে মধ্যে যন্ত্রণা করে। সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যাচ্ছে? এমন লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমে আক্রান্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে ওষুধ খেতে হবে। কয়েকদিন ট্রিটমেন্ট চালালেই দেখবেন সমস্যা কমে যেতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এই কারণেও কিন্তু ক্ষিদে কমে যেতে পারে। তাই বেশি সময় পেট খালি রাখবেন না। প্রতিটি মিলের ৩-৪ ঘন্টা পর কিছু না কিছু খাবার খাবেন। তাহলেই দেখবেন আর ক্ষিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেবে না।
কারণ ২:
ক্ষিদে তো কমছেই সেই সঙ্গে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও হচ্ছে। এমন সব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো কোনও লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ লিভার ফাংশন ঠিক মতো না হলেই সাধারণত এই ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ ৩:
এমনকী ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেও ক্ষিদে কমে যেতে পারে। যেমন ধরুন মুখে সংক্রমণ হলে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। ফলে খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। তাই তো ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়ার আগে সাবধান হওয়াটা জরুরি।
কারণ ৪:
শরীরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি দেখা দিলেও ক্ষিদে কমে যায়। বিশেষত আয়রন এবং ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে এমন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই তো ক্ষিদে কমে যেতে শুরু করলে সময় নষ্ট না করে একটা ব্লাড টেস্ট করে নেবেন। তাহলেই বুঝতে পেরে যাবেন যে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতির কারণে ক্ষিদে কমছে না অন্য কোনও কারণে। প্রসঙ্গত, শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হ্রাস পেলে ক্ষিদে কমে যাওয়ার পাশপাশি ক্লান্তি, কনস্টিপেশন, দাঁত থেকে রক্ত পরা প্রভৃতি সমস্যা দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসা করালে তবেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে।
কারণ ৫:
আপনি কী অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন? হয়তো এই কারণেও ক্ষিদে কমে যেতে পারে। আসলে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পরলে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে যেতে শুরু করে ক্ষিদেও। এক্ষেত্রে নিজেকে শান্ত করতে হবে। তবেই অবস্থার উন্নতি হবে কিন্তু!
কারণ ৬:
অ্যানোরেক্সিয়া নামে একটি রোগের কারণেও ক্ষিদে কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে খিদে কমে যাওয়ার পাশপাশি মারাত্মকভাবে ওজন কমতে শুরু করে। আপনার ক্ষেত্রেও কি এমনটা হচ্ছে? তাহলে এক্ষুনি চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
কারণ ৭:
অবসাদ ক্ষিদে কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময়ই ক্ষিদে কমে যায়। সেক্ষেত্রে নিদিষ্ট চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন পরে।
কারণ ৮:
কিছু ওষুধের কারণেও ক্ষিদে কমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন ধরুন, অ্যান্টিবায়োটিক, মরফিন এবং কেমোথেরাপির ওষুধ চলতে থাকলে খাবার ইচ্ছা কমে যায়।
কারণ ৯:
কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। যেমন, স্টমাক ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সার আক্রান্ত হলে এমনটা হয়ে থাকে।
কারণ ১০:
অ্যালঝাইমার এবং ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজে আক্রান্ত হলেও খাবার খাওয়ার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। প্রসঙ্গত, হার্ট অ্যাটাকের কারণেও অনেক সময় ক্ষিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তাই আপনার বয়স যদি ৬৫ বছর হয় এবং ক্ষিদে কমে যেতে থাকে, তাহলে সাবধান হন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।