November 12, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

মেয়ের জন্য বাবা ভাড়া, চাইলে অন্য আত্মীয়ও 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

মেগুমি একদম বাচ্চা ছিল যখন তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। তার বাবা জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। কিন্তু অনেক বছর পর তার মা তাকে জানান যে মেগুমির বাবা আবার যোগাযোগ করতে চান।

এরপর থেকে মেগুমি ইয়ামাদাকে নিয়মিত দেখতে থাকেন। সে ভেবেছিল ইয়ামাদা তার বাবা আর সেটাই বুঝি তার আসল নাম। কিন্তু পুরো ব্যপারটাই ছিল আসলে বানানো। মেগুমির মা আসাকো বলেন, ছোট থেকেই ওর প্রশ্ন ছিল বাবা কোথায়। ও যেটা জানত তা হলো, ওর জন্মের পরই ওর বাবা চলে গিয়েছিল, আর সেজন্য মেগুমি নিজেকেই দায়ী করত।

অনেক বছর এটা কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু মেগুমির বয়স ১০ বছর যখন হলো, তখন প্রথম আসাকো মেয়ের আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান। ‘আমার সঙ্গে মেয়ে প্রায় কথাই বলত না। ও খুব শান্ত হয়ে গিয়েছিল, আর কোন কিছুতে আগ্রহ ছিল না তার।

আমার অনেক সময় লেগেছিল বুঝতে যে স্কুলে সে ঝামেলায় পড়ছে রোজ। আসাকো ক্রমে বুঝতে পারলেন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের জন্য মেগুমি কেবল নিজেকেই দায়ী ভাবছে না। বাবা নেই বলে সহপাঠীরা তার সঙ্গে মিশত না, জাপানে সিঙ্গেল প্যারেন্ট বা একলা মা কিংবা বাবার সন্তানদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না।

ক্রমে মেগুমি এত অসুখী হয়ে পড়ছিল, সে স্কুলে যেতে চাইত না। সে আমার একমাত্র সন্তান আর তাকে এত বিষণ্ণ দেখে তার বুকটা ভেঙ্গে যেত। বিষয়টি নিয়ে মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোন সমাধান পেলেন না আসাকো। তখন তার মাথায় একটা অন্য বুদ্ধি আসলো। ‘আমার কেবল মনে হচ্ছিল, আমি যদি একজন মানুষ বের করতে পারতাম, যিনি দয়ালু আর ভালো মানুষ, যিনি একজন আদর্শ বাবা হবেন, যিনি আমার মেয়েকে আনন্দে রাখতে সাহায্য করবেন।’

আত্মীয়দের কাছে আসাকো শুনেছিলেন, জাপানে আত্মীয় ভাড়া করার এজেন্সি আছে। যারা চুক্তিতে একজন অভিনেতাকে পাঠায় যিনি কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যান কিংবা ডেটিংয়ে সঙ্গ দিতে যান কোন নিঃসঙ্গ মানুষকে। আসাকো এক এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চান, তারা একজন নকল বাবা পাঠাতে পারবে কিনা।

পাঁচজন আগ্রহী প্রার্থীর অডিশন নেবার পর তাকাশি নামে একজনকে বেছে নেন আসাকো। ‘তার সঙ্গে কথা বলা বেশ সহজ মনে হচ্ছিল আমার। উনি বেশ দয়ালু আর মিষ্টি মানুষ, ফলে আমি আমার মনের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিলাম।’

তাকাশি একটা রেন্টাল এজেন্সি চালান, যেখানে ২০ জন মানুষ নিয়মিত কাজ করেন, আর বিভিন্ন বয়সের এক হাজারের ওপর নারী-পুরুষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তারা যেকোনো ধরণের পরিস্থিতিতে, যেকোনো নাম এবং বেশ ধারণ করে চাহিদামত চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের প্রায় সময়ই মিথ্যা কথা বলতে হয়, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই আইন ভঙ্গ না করে করেন তারা।

তাকাশি নিজেও একজন অভিনেতা, বিভিন্ন সময় তিনি ছেলেবন্ধু, ব্যবসায়ী, বন্ধু এবং বাবার চরিত্রে ভাড়ায় অভিনয় করেছেন। এমনকি পাঁচটি অনুষ্ঠানে বর পর্যন্ত সেজেছেন তিনি। এবার তিনি হলিউডের দুটি সিনেমা দেখে বাবার চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। একটি অস্কারজয়ী সিনেমা লিটল মিস সানসাইন, যেখানে এক অকার্যকর পরিবার একসঙ্গে বেরাতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে নতুন করে বন্ধন তৈরি হয়।

আরেকটি দ্য ডিসেন্ডেন্টস, এই সিনেমায় জর্জ ক্লুনি একজন উদাসীন বাবা চরিত্রে অভিনয় করেন, আকস্মিক স্ত্রী বিয়োগের পর হঠাৎ সন্তান পরিপালনের পুরো দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। ‘এসব সিনেমা দেখে আমি সেখানে ব্যবহৃত লাইন এবং বিভিন্ন শব্দবন্ধ মুখস্থ করে ফেলি। ভিন্ন ভিন্ন পরিবার কীভাবে কথা বলে বা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে, একজন নির্দিষ্ট বাবা বা স্বামী হবার জন্য কী প্রয়োজন সেগুলো খেয়াল করতে থাকি।’

সিনেমা দুইটি আমাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিবার এবং সম্পর্ককে বুঝতে সাহায্য করেছে- তাকাশি বলেন। আসাকো তাকাশির সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেন, তিনি কেমন বাবার অভিনয় প্রত্যাশা করছেন সেটি বুঝিয়ে বলেছেন। ‘আমার চাওয়া ছিল খুব সহজ। প্রথমত, আমি চেয়েছিলাম এতদিন মেগুমির জীবনে অনুপস্থিত থাকার জন্য তার বাবা তার কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করবে। আর মেয়ে যা যা বলতে চায় বাবাকে, সব সে মন দিয়ে শুনবে।’

এরপর আসাকো মেয়েকে একদিন বললেন, যে তার বাবা আবার বিয়ে করেছেন এবং তার সংসার আছে। কিন্তু তিনি মেয়েকে দেখতে চান। তার বাবা একজন ‘অভিনেতা’ বলে মেয়েকে জানান আসাকো। মেগুমি মায়ের কথা শুনে কষ্ট পেলেও রাজি হলো বাবার সঙ্গে দেখা করতে।

আর এর মাধ্যমেই প্রায় ১০ বছর আগে তাকাশির জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ চরিত্রে রূপদান শুরু হলো। আর তিনি তাকাশি থেকে ইয়ামাদা হয়ে যান।

প্রথম দেখায় আগে দেখতে আসেনি কেন বলে বাবার কাছে জবাব চায় মেগুমি। তাকাশি বুঝতে পারছিলেন তার মেয়ের কষ্ট। এরপর থেকে তাকাশি মাসে কয়েকবার করে মেগুমি আর তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময়ে তারা বাইরে কোথাও বেরাতে যান কিংবা সিনেমা দেখতে যান একসঙ্গে এবং জন্মদিনে একসঙ্গে সময় কাটাতে থাকেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেয়ের আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান আসাকো। ‘আমি দেখলাম মেগুমি আগের মত আর বিষণ্ণ না, কথা বলা শুরু করেছে সে। আর সে এত প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে! সে হাসতে আর মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করে। আমার তখন মনে হয় আমার কষ্ট সার্থক।’ এক প্যারেন্টস ডেতে বাবা-মাকে একসঙ্গে দেখে মেগুমি এত খুশী হয়েছিল, তার খুশী দেখে আসাকো কেঁদে ফেলেছিলেন।

তাকাশির সার্ভিস মোটেও সস্তা নয়। প্রতিবার যখনই তাকাশি মেগুমির সঙ্গে দেখা করতে আসে, আসাকোকে দশ হাজার ইয়েন মানে ৯০ মার্কিন ডলার করে দিতে হয়। যদিও আসাকো ভালো চাকরি করেন, তবু তাকে এই পয়সাটা প্রতিমাসে জমাতে হয়।

Related Posts

Leave a Reply